রবিবার, ১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ

সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যাখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাম্প্রতিক এক মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এর জবাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিক ও মিডিয়া আউটলেটগুলো যেন তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে ব্যাপারে মার্কিন সরকারের জোরালো অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন পিটার হাস। তিনি বলেন, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ যে কোনো সরকারের সমালোচনামূলক মতামতের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা আমাদের নীতির যে কোনো উপাদানে জনসাধারণের মতামতের প্রতিফলনকে স্বাগত জানাই।

সম্প্রতি চ্যানেল২৪-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে পিটার হাস বলেন, গণমাধ্যমও মার্কিন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারে’। চিঠিতে রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের ব্যাখ্যা চান সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। ওই সাক্ষাৎকারে পিটার হাস বলেছিলেন, আমরা নীতিটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি। সেটি যে কারও বিরুদ্ধেই হতে পারে। তারা সরকারপন্থি, বিরোধী দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ কিংবা মিডিয়াও হতে পারে।’

চলতি বছরের ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে বাইডেন প্রশাসন। ২২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ইমেইলে পিটার হাসকে লেখা চিঠিতে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘মিডিয়ার ভিসাসংক্রান্ত বিধিনিষেধের ব্যাপারে উল্লিখিত মন্তব্য নিয়ে তার মনে ও সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে বলেই তিনি লিখছেন। মাহফুজ আনাম তার পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘সত্যি বলতে এই মন্তব্যটি আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। তাই আমরা বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য অনুরোধ করছি।’

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও দেশটির রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সব সময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের পক্ষে অটল ছিলেন উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ওই মন্তব্য তাদের অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।

ভিসা বিধিনিষেধ নির্বাচন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের বাইরে অন্য কিছুর ওপর ভিত্তি করে নয়, রাষ্ট্রদূতের এমন মন্তব্যের উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম লিখেছেন, ‘মিডিয়ার কাজ হলো লেখা কিংবা সম্প্রচার করা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাংবাদিক যা লেখেন বা সম্প্রচার করেন তার ওপর ভিত্তি করে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে কি না? যদি তাই হয়, তাহলে এটি কি বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আওতায় আসে না? মিডিয়ার ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? এখানে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে?’ মাহফুজ আনাম বলেন, ‘মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী সব সময়ই ব্যক্তিগতভাবে তার এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে ভিসানীতি মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনীর মূল্যবোধ এখানে কীভাবে প্রতিফলিত হবে?’ জবাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস লিখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায় তাদের জন্য মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ করবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উদ্ধৃত করে পিটার হাস বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ওই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, ভিসানীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রতীয়মান হয় এমন যে কোনো বাংলাদেশির জন্য প্রযোজ্য। মিডিয়াকে কেউ তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নিলে তার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।’

সর্বশেষ খবর