সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আইন মন্ত্রণালয়ের না

বিদেশে যেতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ সিদ্ধান্ত : আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন মন্ত্রণালয়ের না

খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে তাঁর ভাই যে আবেদন করেছিলেন তাতে ‘না’ সূচক মতামত দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে আইনি মতামত দিয়ে ফাইলটি গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইনগতভাবে এ অনুমতি দেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে নেই। বিদেশে যেতে হলে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতসহ ফাইলটি সেবা ও সুরক্ষা বিভাগে ফেরত এসেছে। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফলাফল এ সিদ্ধান্ত। আইনমন্ত্রী গতকাল বক্তব্য দেওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় কায়সার কামাল এ অভিযোগ করেন। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, আবারও প্রমাণিত হয়েছে দেশে আইনের শাসন নেই। খালেদা জিয়ার প্রতি ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। এ আইনজীবী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার চাইলেই নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পারে। তিনি আরও বলেন, আইনমন্ত্রী পাবলিক স্টেটমেন্ট দিয়ে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে যদি আবেদন করা হয়, সেটি সুবিবেচনা করা হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার গত ২৫ সেপ্টেম্বর আবেদনটি করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে দুই শর্তে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। তবে কিছু দিন ধরে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে দাবি করে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার কথা বলছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনগত মতামতের জন্য আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই আবেদনে অনুমতি দেওয়ার সুযোগ না থাকার কথা বললেন আইনমন্ত্রী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন কী কারণে নাকচ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সচিবালয়ে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম যে আবেদনটি ছিল, যা ২০২০ সালের মার্চে নিষ্পত্তি হয়। সেই আবেদনে বলা ছিল, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা যেন করা হয়। তখন দুটি শর্তে তাঁর দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা-১-এর ক্ষমতাবলে দেওয়া হয়েছিল। শর্তগুলো হলো- প্রথমত, তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। সেই শর্তগুলো মেনে খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হন এবং বাসায় ফিরে যান। সেভাবেই সেই দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়। তবে প্রতি ছয় মাস বৃদ্ধি করা যাবে কি না, বিষয়টি উন্মুক্ত ছিল। এরপর সেই সময় ছয় মাস করে মোট আটবার বাড়ানো হয়েছে।

আইনে কেন সুযোগ নেই- সেই ব্যাখ্যা তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার অবকাশ আইনে থাকে না। আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১-এর উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং সর্বশেষ উপধারা ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেই মতামত হচ্ছে, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটি অতীত ও শেষ হয়ে গেছে। এটি আর খোলার উপায় নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ফৌজদারি ৪০১ ধারায় দুটি শর্তযুক্তভাবে যে আদেশবলে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি বাতিল করে পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে তা করা হবে।

সর্বশেষ খবর