সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

সংসদে বেশির ভাগ সময় কাটে প্রশংসায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদে বেশির ভাগ সময় কাটে প্রশংসায়

চলতি একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোরাম সংকটের কারণে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট সময় নষ্ট হয়েছে। ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। এতে সরকারের অপচয় হয়েছে ৮৯ কোটি ২৮ লাখ ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া আইন প্রণয়ন, জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে জাতীয়           সংসদের অধিবেশনগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর ছিল না। সংসদে সরকারি দলের সদস্যরা বড় সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রশংসা এবং সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও নীতি বিষয়ক পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। টিআইবির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট রাবেয়া আক্তার কনিকা ও আবদুল হান্নান সরকার গবেষণাটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলা যাবে না, তবে প্রত্যাশিত পর্যায়ে ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সরকারি দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও কার্যকর বিরোধী দলের অভাবের কারণে মূলত সংসদ প্রত্যাশিত মাত্রায় ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ ছাড়া সংসদের কার্যক্রম পরিচালনায় স্পিকারের জোরালো ভূমিকার ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দলের তুলনায় অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সংসদে অধিক ভূমিকা পালন করতে পেরেছে। যদিও সেখানে পারস্পরিক সমন্বয় ছিল না। সে কারণে তাদের কার্যকর ভূমিকা দেখা যায়নি। গত সংসদে সদস্যদের উপস্থিতি ছিল ৬৩ শতাংশ আর বর্তমান সংসদে তার পরিমাণ ৫৫ শতাংশ। প্রধান বিরোধী দলের উপস্থিতি ৫৯ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ হয়েছে। টিআইবি প্রধান বলেন, সংসদে অশ্লীল ভাষা, অসংসদীয় শব্দচয়ন, অঙ্গভঙ্গি, সংসদ চলাকালে পারস্পরিক আলোচনা, মোবাইল চালানো, ঘুমিয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এগুলো সংসদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি প্রত্যাশাও রয়েছে আমাদের। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। টিআইবির গবেষণায় চলতি সংসদের প্রথম থেকে ২২তম অধিবেশনের কার্যক্রম ও সংসদীয় কমিটির কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশন পর্যন্ত ৭৪৪ ঘণ্টা ১৩ মিনিটের সংসদীয় কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আইন প্রণয়নে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১৬.৭ শতাংশ সময়। জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও এর ওপর আলোচনায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ সময়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রায় ২০ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রশংসায়। ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ সময় ব্যয় করেছেন সরকারের অর্জন নিয়ে কথা বলে। প্রায় ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছেন অন্য দলের সমালোচনায়। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছেন শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সময়।

জাতীয় সংসদের মোট সদস্য ৩৫০। ন্যূনতম ৬০ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের কোরাম পূর্ণ হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ২২টি অধিবেশনে কোরাম সংকটে কেটেছে ৫৪ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট, যা সংসদের কাজে মোট ব্যয় হওয়া সময়ের সাড়ে ৬ শতাংশ। অধিবেশন শুরুর তুলনায় বিরতি-পরবর্তী সময়ে কোরাম সংকট বেশি দেখা গেছে। কোরাম সংকটে ৮৪ শতাংশ কার্যদিবসে অধিবেশন দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গড়ে প্রায় ৫ মিনিট দেরি হয়েছে। আর বিরতির পর অধিবেশন শুরু হতে শতভাগ কার্যদিবসেই দেরি হয়েছে। কোরাম সংকটে অপচয় হওয়া প্রতি মিনিটে ব্যয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ টাকা। প্রতিদিন গড়ে কোরাম সংকট ছিল ১৮ মিনিট। অবশ্য অষ্টম, নবম ও দশম জাতীয় সংসদের তুলনায় চলতি সংসদে কোরাম সংকট কমেছে। দশম সংসদে গড়ে ২৮ মিনিট কোরাম সংকট ছিল, নবম সংসদে ছিল গড়ে ৩২ মিনিট। টিআইবির গবেষণাটিতে উঠে আসে জাতীয় সংসদে সর্বোচ্চ ৬২.৩ শতাংশ সংসদ সদস্য হলেন ব্যবসায়ী।

 ১৪ শতাংশ সদস্য আইনজীবী, ৪১.১ শতাংশ সদস্য  স্নাতক বা স্নাতকোত্তর  পাস করেছেন। একাদশ জনপ্রতিনিধিত্ব ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ ২৬.৬ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। বাজেট অধিবেশনে বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা ছিল মাত্র ৩৫.৭ শতাংশ। ৫০টি সংসদীয় কমিটির মধ্য থেকে মাত্র চারটিতে বিরোধী দল হতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো কমিটিই মাসে ন্যূনতম একটি করে সভা অনুষ্ঠান করার নিয়ম পালন করেনি।

সর্বশেষ খবর