সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রবাসী আয়ে ধস বৃদ্ধি রপ্তানি আয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে চরম আকার ধারণ করেছে ডলার সংকট। সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স)। সদ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার; যা গত মাসের তুলনায় ১৬ শতাংশ কমেছে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (এক টাকা সমান ১০৯.৫০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১৪ হাজার ৭১২ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। এটি গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে এসেছিল ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এরপর সেপ্টেম্বরের আগে আর কোনো মাসে এত কম রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিদায়ী সেপ্টেম্বরের পুরো সময় ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার এসেছে, যা গত বছরের একই মাস (সেপ্টেম্বর) থেকে ১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকে এসেছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৮ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। গত জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগস্টে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। গত জুনে রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল।

সেপ্টেম্বরেও বেড়েছে রপ্তানি আয় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ : জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে কিছুটা উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও দেশের রপ্তানি খাতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত আগস্টের পর সেপ্টেম্বর মাসেও বেড়েছে রপ্তানি আয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, গত মাসে ৪ হাজার ৩১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি।  ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকজুড়েই রপ্তানি আয় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। গত জুলাইয়ে ১৫ শতাংশ, আগস্টে ৪ শতাংশের পর সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ১০ শতাংশের বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলো। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃখাতে কিছু অনিশ্চয়তার পরও রপ্তানি বাড়ছে, যা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। তবে আমাদের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রবৃদ্ধি আরও বাড়াতে হবে।

সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টম্বর) পণ্য খাতের অর্জিত রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬৮৫ মিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি হলেও কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৪৯৭ মিলিয়ন ডলার। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে প্রথম প্রান্তিকের জন্য কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৯৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বরাবরের মতো সেপ্টেম্বরেও সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাকে প্রায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ৬ হাজার ৭৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে প্রায় ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৪ হাজার ৮৫৫ মিলিয়ন ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত আগস্টে নিট পোশাকে ১৭ শতাংশ ও ওভেনে প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, নিট পোশাকে রপ্তানি বাড়লেও ওভেনে কমেছে। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে প্লাস্টিক, কাগজ ও কাগজপণ্য, ইলেকট্রিকক পণ্য, গুঁড়া মসলা, জীবন্ত মাছ, সিমেন্ট, চা, শাকসবজি, ওষুধ ও ফলমুলে। অপরদিকে রপ্তানি কমেছে তামাক, সিরামিক, ফার্নিচার, কার্পেট, চিংড়ি, বাইসাইকেল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাঁচাপাট, শুকনা খাবার, হোম টেক্সটাইল ও জাহাজে।

সর্বশেষ খবর