সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খেলাপি ঋণ রেকর্ড দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াল

শাহেদ আলী ইরশাদ

খেলাপি ঋণ রেকর্ড দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াল

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শেষ তথ্য মতে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে মার্চ-জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। শেষ ছয় মাসে (ডিসেম্বর ২০২২-জুন ২০২৩) বেড়েছে ৩৫ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। গতকাল প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকগুলো ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যার মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তিন মাস আগে মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। প্রথম তিন (জানুয়ারি-মার্চ) মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। আবার গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছর জুনে এসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। মহামারি করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঋণ পরিশোধে পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ঋণ শোধ না করেও গ্রাহককে ‘খেলাপি’ মুক্ত রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কম সুদে ঋণ নেওয়া ও ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় ছিল ২০২২ সালেও। চলতি বছরও ঋণের কিস্তির অর্ধেক পরিশোধে রয়েছে বিশেষ ছাড়। গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল যদি কোনো গ্রাহক চলতি বছরের জুনের মধ্যে ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দেয় সে খেলাপি হবে না। ফলে যারা ঋণ নিয়ে কিস্তি শোধ না করে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা কিস্তির অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হওয়ার সুযোগ পান। শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হয়। সাধারণত ব্যবসা শুরু করা বা শিল্প-কারখানা গড়ে তুলতে মেয়াদি ঋণ নেওয়া হয়। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম গতকাল বলেন, খেলাপিদের বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না। খেলাপি ঋণ ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। এতে করে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানে। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে, যা আমাদের জন্য কাম্য নয়। তিনি আরও বলেন, এখন সুবিধা বন্ধ করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে তা বছরের পর বছর ঝুলে না থাকে। এ ছাড়া খেলাপিদের সম্পদ নিয়ে নিতে হবে। কঠোর অবস্থায় যাওয়া ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প উপায় নেই।

সর্বশেষ খবর