মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কী হচ্ছে এই অক্টোবরে

টানা কর্মসূচিতে সরকারকে পাহারায় আওয়ামী লীগ

এক পক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভোটের প্রচারণায়, অন্য পক্ষে কঠোর আন্দোলনের চিন্তা

রফিকুল ইসলাম রনি

টানা কর্মসূচিতে সরকারকে পাহারায় আওয়ামী লীগ

অক্টোবর মাসকে রাজনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই মাসটাই দেশের রাজনীতিতে গতিপথ ঠিক করে দেবে। কারণ আগামী নভেম্বরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলে জানুয়ারিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মাঝখানে অক্টোবর মাসই দুই রাজনৈতিক দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি বলছে, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ মাসেই সরকারের পতন ঘটানো হবে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা রাজপথে সক্রিয় থেকে সরকারকে পাহারা দেবে। এ জন্য মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। সরকারবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিতে গোটা অক্টোবর মাসজুড়েই রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশকে জনসভায় রূপ দেবে আওয়ামী লীগ।

অক্টোবরে সরকার পতন ঘটাতে বিএনপির মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা আমাদের পতন দেখছে, এই অক্টোবরে তাদেরই পতন হয় কি না? নিজেদের পতনের জন্য অপেক্ষা করুন। ভুলের রাজনীতিই বিএনপিকে পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতায় বসেনি। আওয়ামী লীগকে যারা ভয় দেখাচ্ছে, ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম শেষ, এখন অক্টোবরের আল্টিমেটাম। অক্টোবরে মাসেই পতন ঘটাবে। পতন ঘটাতে ঘটাতে নিজেরাই কতবার খাদে পড়েছে। একটা রাজনৈতিক দলের কথাবার্তা সীমারেখার মধ্য থেকে বলা উচিত।’

জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার ঢাকার প্রবেশমুখ আমিনবাজারে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির নাশকতা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমরা মঙ্গলবার আমিনবাজারে সমাবেশ করব। আজকের সমাবেশেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা গোটা অক্টোবর মাসজুড়েই রাজপথে সক্রিয় থাকব, যেখানেই বিএনপির সন্ত্রাসীরা নৈরাজ্য করবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তারা আবার নির্বাচন বন্ধ করতে আগুন সন্ত্রাসের পথে হাঁটলে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই আগুনেই তাদের হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ কোনোভাবেই ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফর শেষে দেশে ফিরবেন। ওই দিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হবে। এ জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেবেন। আগামী ৫ অক্টোবরও কাঁচপুরে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৭ অক্টোবর ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। এ উপলক্ষে এয়ারপোর্টের সামনে এভিয়েশন মাঠে এক সুধী সমাবেশ হবে। সেখানে ২ লক্ষাধিক লোকের সমাগম করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

১০ অক্টোবর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইনের উদ্বোধন হবে এবং পদ্মা সেতুতে প্রথম রেল চলাচল উদ্বোধন হবে। এরপর ভাঙ্গায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। ১৬ অক্টোবর আইনজীবীদের বার কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হবে। সে উপলক্ষে সেখানে আইনজীবী মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

২৩ অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হবে। এ উপলক্ষে মতিঝিলে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ২৮ তারিখে চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন হবে। সেখানেও বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ পুরো মাসব্যাপী আরও অনেক কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করে রাজপথে থাকবে আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অক্টোবরে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে- এটা কথার কথা। এসব কথাবার্তার কোনো গুরুত্ব নেই। তারা সরকারের পতন ঘটাতে তো পারবেই না, বরং বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। অক্টোবরের শেষে বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেবে।’ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল দেওয়ার আগে দেশের ভেতরে বিএনপি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। কারণ সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন না হলে সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এই সংকট সৃষ্টি করার সুযোগ বিএনপিকে দেবে না ক্ষমতাসীনরা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। কোনো পরাশক্তি তা প্রতিহত করতে পারবে না। যদি কেউ প্রতিহত করার চেষ্টা করে তাহলে তার জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ অস্ত্রের জবাব খালি হাতে দেবে না। নেতা-কর্মীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। খুনি, দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। কোনোভাবেই তাদের হাতে দেশকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। খুনি জিয়া মোশতাক গংরাও উৎখাত হয়ে গেছে। আমরা কাউকে ভয় করি না। নেতা-কর্মীদের ওপর আঘাত করে আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা যাবে না।’ দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অক্টোবরে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার রাজপথে সক্রিয় থাকবে দলটির নেতা-কর্মীরা। যেখানেই সন্ত্রাস-নাশকতা সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘বিএনপি অক্টোবরে সরকার পতনের ঘোষণা দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারকে পাহারা দেওয়া। আওয়ামী লীগের কর্মীরা রাজপথে সক্রিয় থেকে সরকারকে পাহারা দেবে। শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। রাজপথ কাউকে ইজারা দেইনি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির হাতেই রাজপথ থাকবে। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতের হাতে রাজপথ তুলে দেব না।’

সর্বশেষ খবর