মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
কী হচ্ছে এই অক্টোবরে

রাজপথেই সবকিছুর ফয়সালা চায় বিএনপি

এক পক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভোটের প্রচারণায়, অন্য পক্ষে কঠোর আন্দোলনের চিন্তা

শফিউল আলম দোলন

রাজপথেই সবকিছুর ফয়সালা চায় বিএনপি

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। চলতি মাসেই রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা করতে চায় দলটি। শুরু করতে চায় সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্ব। প্রথম ধাপের চলমান ‘রোডমার্চ ও সমাবেশ’ ৫ অক্টোবর শেষ হওয়ার পর ‘অলআউট’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ, মহাসমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা, সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে। কিংবা আদালতপ্রাঙ্গণে অবস্থান, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ও গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিও দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন ভিসানীতি কাজে লাগিয়ে অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে টানা ‘হরতাল-অবরোধের’ মতো কঠোর কর্মসূচিও পরিকল্পনায় রয়েছে। কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা ও পালনের মধ্য দিয়ে চলতি অক্টোবরেই রাজনৈতিক ফয়সালায় পৌঁছাতে চায় বিএনপি। ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ শেষে ৭ অক্টোবর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। পাশাপাশি এক দফা দাবি আদায়ের পরই জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিএনপি। বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনগণ রাজপথে নেমে গেছে। ইনশা আল্লাহ এবার পরিবর্তন নিশ্চিত। জনগণের বিজয় হবেই। কোনোভাবেই এ গণ আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এক দফা আদায়ের লক্ষ্যে এখন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। জানা গেছে, চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা জোট ও বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৃথকভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদ (নূর), এনডিএম প্রতিনিধিসহ সমমনা অন্যান্য দল ও জোটের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে দলটি। এসব বৈঠকে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যকরের ব্যাপারে সরকারের মনোভাব নিয়ে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টি বিরোধী দলের অনুকূলে থাকলেও সরকার পতনে চূড়ান্ত আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে হলে রাজপথেই তাদের মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে একমত পোষণ করেন নেতারা। সে ক্ষেত্রে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার বিষয়েই সবাই একমত হন। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এখন তাদের এ আন্দোলনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে নিয়েছে। সেজন্য দলটি এবার সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবারের আন্দোলন ‘ডু অর ডাই’। হয় মরব, নয়তো লড়ব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব, দেশের মানুষের মালিকানা ফেরত দেব। তিনি বলেন, আমরা এবার হরতাল করিনি। কিন্তু করব না সেই প্রতিজ্ঞাও করিনি। অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হরতাল-অবরোধসহ যা যা কর্মসূচি পালন করা দরকার, গণতান্ত্রিক পন্থায় সব ধরনের কর্মসূচিই দেওয়া হবে। জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে পালিত টানা কর্মসূচির মূল্যায়ন করা হয়। ইতোমধ্যে রাজধানী ও তার আশপাশ জেলায় ১০টির মতো সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে কয়েকটি। এসব কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। জনস্রোতের এ ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার পতনের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। মানুষ এখন মুক্তির দিন গুনছে। চলতি অক্টোবর মাসটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ আর এখন একটি দিনও অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আশা করি খুব অল্প সময়ের ভিতরেই পরিবর্তন আসন্ন। জনগণের বিজয় অনিবার্য। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। আশা করি কোনো টালবাহানা না করে সরকার খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেবে। কারণ অক্টোবরের পর সরকার হয়তো এ সুযোগটাও হারাতে পারে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বর্তমানে খুবই কঠিন সময় পার করছে। বিশেষ করে সরকারের বিদ্যমান একগুঁয়েমি মনোভাব মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকে আন্দোলনের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে সরকার কী কী করতে পারে, আবার আমরা কী ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারি, কীভাবে কী কী করা সম্ভব ও উচিত এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্ষমতাসীন সরকারের সময় ঘনিয়ে আসছে বলেই মনে করেন ডাকসুর এই সাবেক ভিপি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামনে কঠোর কর্মসূচি আসছে। শিগগিরই এ আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাবে। সরকার পতনের প্রতিটি কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রতি আর কোনো মানুষের সমর্থন নেই।

এদিকে জানা গেছে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ সরকারবিরোধী ১৫টি ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে নতুন জোট গঠনের পর এবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের যুবসংগঠন নিয়ে ‘যুব ঐক্যজোট’ গঠনেরও প্রক্রিয়া চলছে। নবগঠিত ছাত্রঐক্য রাজধানীতে একটি ‘ছাত্র কনভেনশন’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি আইনজীবী সংগঠনগুলোসহ আরও বেশকিছু পেশাজীবী সংগঠন নিয়ে একটি ‘পেশাজীবী কনভেনশন’ করারও বিষয়ে একমত পোষণ করেন নেতারা।

সর্বশেষ খবর