মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
লন্ডনে শেখ হাসিনা

আমরাও স্যাংশন দেওয়ার ক্ষমতা রাখি

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

আমরাও স্যাংশন দেওয়ার ক্ষমতা রাখি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন একটা কথা শুনি স্যাংশন। কে কাকে স্যাংশন দেয়? আমরাও স্যাংশন দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। ১০ ডিসেম্বর গ্যাস বেলুনের মতো সব চুপসে যাবে। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং কেস, ঘুষ-দুর্নীতির মামলা সব তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। ওই সময় আমাকে দেশে ফিরতে দেওয়া না হলেও আমি দেশে যাই। আর তারেক জিয়া লন্ডনে এসে বসে আছে। তারা আন্দোলন করে! আমি কিছু বলি না। তবে নির্বাচনের সময় যদি তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষের ওপর হাত দেয় তাহলে আমি চুপ করে বসে থাকব না। প্রধানমন্ত্রী গতকাল লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রবাসীদের সমাবেশে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফর ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও প্রবাসীদের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। জাতিসংঘের বৈঠক শেষে তিনি ব্যক্তিগত সফরে পাঁচ দিনের জন্য লন্ডনে পৌঁছান ৩০ সেপ্টেম্বর। স্থানীয় সময় ৪টা ৫১ মিনিটে বক্তব্য শুরু করে প্রায় দেড় ঘণ্টা আবেগঘন বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে তিনি তাঁর বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মা, ভাই পরিবার হারানোর বেদনার কথা বলেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বোনের কান্নাকাটিতে আমি তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করাতে চায়। পৃথিবীতে কোনো দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর নজির নেই। আমাকে বলে সহানুভূতিশীল হতে। অথচ আমার বাবা, পরিবার হত্যার দিন ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন তৈরি করে সে জন্মদিন উযযাপন করে। আর আমার কাছে সহানুভূতি চায়! তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বোমা হামলায় আইভী রহমানসহ আমার নেতা-কর্মী মারা যায়। সে সময় সব আলামত নষ্ট করেছে। সে তখন বলেছে, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে হামলা করেছি। খালেদা জিয়ার ছেলে মারা গেছে, আমি তো মানুষ, আমিও একজন মা। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম খালেদা জিয়ার বাসায় যাব। আমি সহনুভূতি দেখাব। আমাকে সে যেতে দেয়নি।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফের সভাপতিত্বে সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল আহাদ চৌধুরীসহ অনেকে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া প্রহসনের নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় গেলেও মার্চ মাসে মাত্র দেড় মাসের মাথায় জনরোষে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপর ১৯৯৬ সালের জুন মাসে জনগণের রায়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।

তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে তারা জামায়াতের সঙ্গে ক্ষমতায় এসে বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করে। ৪৫০ স্থানে বোমা হামলা, আমাদের সিলেটে কামরানের ওপর বোমা হামলা, শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি, হাওয়া ভবন তৈরি, মানি লন্ডারিং, পাঁচবারের দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সবই করেছে তারা ওই শাসনামলে। ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করল। তাদের অপশাসনে দেশে জরুরি অবস্থা আসে। আর্মির শাসনে দেশ যায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় ঐক্যজোট পেল ৩০ আসন। আর বাকিসব পেল আমাদের মহাজোট। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচন হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ৩ হাজার ৮০০ বাস পুড়িয়েছে। ৩ হাজার মানুষ মেরেছে। ৫০০ স্কুল, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে। তাদের রাজনীতি হচ্ছে দেশের সম্পদ ধ্বংস করা। ক্ষমতায় থাকতে প্রচুর টাকা বানিয়েছে। মানি লন্ডারিং করে বিদেশে টাকা এনে এখন সে টাকা খরচ করছে। আমাদের শাসনামলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছে। তিনি বলেন, অবরোধ ঘোষণা করে খালেদা জিয়া নিজেই অবরুদ্ধ হয়ে ছিল নিজের কার্যালয়ে। অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। ২৯ পুলিশ হত্যা করেছে। আর যদি দেশের মানুষের ওপর কোনো অত্যাচার করে তাহলে আর কোনো ছাড় নেই। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর জয় বাংলা স্লোগান মুছে দিয়ে দেশে ছেলেমেয়েদের হাতে মাদক আর অস্ত্র তুলে দেওয়ার রাজনীতি করেছে তারা ক্ষমতায় থাকতে। আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন প্রবৃদ্ধি তলানিতে রেখে যায়। বর্তমানে আমাদের ৭.২৫ প্রবৃদ্ধি। কভিডের আগে ছিল ৮ শতাংশের ওপরে। মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালে ছিল ৫০০ মার্কিন ডলার, এখন ২৬০০ মার্কিন ডলার। বিএনপির সর্বশেষ বাজেট ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকার।

দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের অবদানের কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কত অপবাদ, চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকা দিয়েই করব। সেটা করেছি। সারা দেশকে একটি নেটওয়ার্কের মধ্যে আনতে আরও কিছু কাজ শেষ হওয়ার পথে। তিনি বলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। আমাদের আমলে ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক যোগাযোগ। আমরা ডিজিটালাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনা করে দিয়েছি। প্রবাসীরা এখানে বসেই খাজনাসহ সব তথ্য দেখতে পারবেন। এ সময় তিনি স্লোগান দেন, মুজিবের বাংলায় কেউ ভূমিহীন থাকবে না। ২৫০ উপজেলায় আমরা দুই কাঠা জমি দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ব্রিটেনের এমপি রুশনারা আলী  -পিআইডি

যে কোনো মূল্যে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে : এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে। কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতা দখল করতে পারবে না। বাংলাদেশের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) একটি প্রতিনিধি দল লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাজ হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা বিষয়ক এপিপিজির চেয়ার রুশনারা আলী এমপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- স্কটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের সদস্যদের বিষয়ে এপিপিজি ভাইস চেয়ারম্যান বীরেন্দ্র শর্মা এমপি, ভাইস চেয়ার ভ্যালেরি ভাজ এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন এমপি এবং ফয়সল চৌধুরী এমএসপি প্রমুখ। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে এপিপিজি প্রতিনিধি দলকে শেখ হাসিনা বলেন, এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য আইন করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিরোধী দলে থাকাকালীন তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছবি ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিয়ে ভোটার তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত হয়ে প্রতিনিধি দল সন্তোষ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের তদারকির জন্য বাংলাদেশ এএপিজি প্রতিনিধি দলকে একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এএপিজির সব সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। মোমেন বলেন, ব্রিটিশ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে বাংলাদেশকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সর্বশেষ খবর