মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় পার্টি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটগত না এককভাবে করবে তা পর্যবেক্ষণ করছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। আপাতত ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠ গোছাচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রার্থী ঠিক করছি। জাতীয় নির্বাচনে জোট না এককভাবে অংশ নেব, তা অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত করেনি জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা। আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘চলমান বিরোধিতা’ কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। জাপার একাধিক কো-চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি খানিকটা ঘোলাটে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক শক্তির অবস্থান নিয়ে খানিকটা সন্দিহান জাপা। আর এ কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কোন প্রক্রিয়ায় হবে, এ নিয়ে নীতি-নির্ধারকরা এখনই সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ। এ ছাড়া জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায় সে দিকটিও পর্যবেক্ষণ করছেন জাপার জ্যেষ্ঠ নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইলেও জাপা তা চায় না। কারণ হিসেবে বলছেন, বিগত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া কোনো দল লাভবান হয়নি। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ের উপনির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাই নতুন ফর্মুলায় আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাপা। দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন সরকারের সমালোচনা করছেন শীর্ষ নেতারা, বিশেষ করে পার্টির চেয়ারম্যান। ফলে ‘গৃহপালিত’ দলের তকমা মুছে মানুষের কাছে স্বাতন্ত্র্য জাপা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা করছে। তারা মনে করেন, এতে জাপা নিয়ে নতুন আশা ও নবজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে, যা সরকারের ভয়ের কারণ। এ কারণেই সরকার জাপাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। জাপাকে আন্দোলনে না থাকার কারণ হিসেবে বলছেন, সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকলেও আন্দোলনে না থাকার কারণ হিসেবে দলটির নেতারা সাংগঠনিক দুর্বলতা ও বিএনপির আধিপত্যের কথা বলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির এক নেতা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা কারণে সরকার চাপে রয়েছে। সরকারের জনসমর্থনও কমেছে। একদিকে সরকার জাপার সমর্থন চায়, অন্যদিকে জাপাকে ভাঙার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ওপর নির্ভর করছে জাপার একক না জোটগত ভোটে অংশ গ্রহণের বিষয়টি। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইলেও জাপা তা চায় না। কেননা, বিগত দিনগুলোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া কোনো দল লাভবান হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। সে কারণে নতুন ফর্মুলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন চায় জাপা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটা নির্বাচনী ব্যবস্থা চান তারা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে ফর্মুলা জাপা দিতে পারে। দরকার হলে সব দলের কাছ থেকেও ফর্মুলা নিয়ে বসে ঠিক করা যেতে পারে বলে মনে করেন দলটির নীতি-নির্ধারকরা। এদিকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে চান না জাপার শীর্ষ নেতারা। এমন আলোচনা দলের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। আবার সরকারের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া জাপার জন্য কঠিন- এ বাস্তবতার কথাও বলছেন নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, এককভাবে ভোট করলে জাপা ভালো করতে পারবে না। তাই পার্টির একটি বড় অংশ চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি বিএনপিসহ তাদের সমমনাদের আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রাম কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দেনদরবার করে যত বেশি আসন নেওয়া যায় ততই নিরাপদ। আর বিএনপি আন্দোলন করে সফল হলে জাপার অবস্থান মোড় নেবে অন্যদিকে। সব মিলিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপার অবস্থান কী হবে, তা চূড়ান্ত হবে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি বিবেচনা করে।

সর্বশেষ খবর