বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ

বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে সেটাই প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে সেটাই প্রশ্ন

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা এখন অনেকটা আইবল টু আইবল। মানে শাসকদল ও বিরোধীরা একে অন্যের দিকে যেন চোখ রাঙিয়ে আছে। এক ধরনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে বের হতে সব পক্ষকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও তাই চাইছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে- নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা, নাকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেটাই প্রশ্ন। আগামী নির্বাচন ও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি এসব কথা বলেন। ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, এখন অক্টোবরের শুরু, অনেকে মনে করছেন সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। যে কোনো মূল্যে জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। না হলে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দেবে। নির্বাচন কমিশন বলছে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা প্রস্তুত। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রিন্সিপাল অনুসারে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া জরুরি। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক। তা না হলে এ ধরনের নির্বাচন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, স্যাংশন বিষয়টি নিয়ে আমি প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা করছি। সম্প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দুর্নীতিবিষয়ক কোঅর্ডিনেটর রিচার্ড নেফিউ বাংলাদেশে এসে চটজলদি দুদকে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা মনে করছেন, স্যাংশন দুর্নীতি প্রতিরোধে একটা কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা যে ট্রেইলটি দেখছি, বছর দুয়েক আগে ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং সে সময়কার সাতজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর স্যাংশন প্রদান করে। এপ্রিলে আরও দুজন অনারারি কনসালের ওপর স্যাংশন আরোপ করা হয়। এরপর সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যৌথ বিবৃতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা তুলে ধরে। এরপর গত ২৪ মে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন টুইটবার্তায় ভিসানীতি ঘোষণা করেন। ২০ সেপ্টেম্বর ম্যাথিউ মিলার ভিসানীতি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ঘোষণা দেন। যারাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ আয়োজনে, নির্বাচন পূর্বকালে বা নির্বাচন দিবসে বা পরবর্তীকালে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নাগরিকের ভোট প্রদানে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন তাদের ওপর এ ভিসানীতি কার্যকর হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য আরেকটি খড়্গ আসতে পারে চলতি মাসেই। আদিলুর রহমান খান এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’-এর পরিচালককে যে দন্ড প্রদান করা হয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাংলাদেশ সরকারকে তাদের অবস্থান বুঝিয়ে দিতে অক্টোবরের মাঝামাঝি একটি রেজুলেশন নিতে যাচ্ছে। ইউরোপ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলো একযোগে এ ধরনের অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে বসতে পারে। বিষয়টা এমন দাঁড়াবে যে, বাঘ আসছে বাঘ আসছে, কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত বাঘ দেখা না যাচ্ছে ততক্ষণ আমরা বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিই না। একটা সময় বাঘ যখন এসে হাজির হবে, তখন কে কোন দিকে ছুটে পালাবে বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, রিচার্ড নেফিউ ফিরে যাওয়ার পর এফবিআই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসতি করা ধনাঢ্য ১০ বাংলাদেশির সম্পত্তির খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে। তার সূত্র ধরে আমরাও দেখলাম, আমাদের এখানকার গণমাধ্যমে প্রায় ২৫২ ব্যক্তির নাম প্রকাশ পেয়েছে, যাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আছে পাশ্চাত্য দুনিয়ায়। তারা কোন পথে এ সম্পদ স্থানান্তর করলেন তা বের করার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে আমাদের কর্তৃপক্ষ। এসব ব্যক্তি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলে তার ফল কী দাঁড়াবে, তা নিয়েও মূল্যায়ন শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর