শিরোনাম
বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ওবায়দুল কাদের

তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়েছে যথাসময় নির্বাচন

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়েছে যথাসময় নির্বাচন

গতকাল আমিনবাজারে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

তলে তলে সবার সঙ্গে আপস হয়েছে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, তলে তলে আপস হয়ে গেছে। আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই। যথাসময়ে নির্বাচন হবে। ওবায়দুল কাদের গতকাল বিকালে সাভারের আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ তুলে বক্তৃতার শুরুতে বলেন, দুই সেলফিতেই বাজিমাত। এক সেলফি দিল্লি, আরেক সেলফি নিউইয়র্কে। শেখ হাসিনা আর পুতুল, জো বাইডেনের সেলফিতে দিল্লিতে বাজিমাত। তারপর নিউইয়র্কে বাজিমাত। কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি।

তলে তলে আপস হয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপস হয়ে গেছে। দিল্লি আছে, আমেরিকার দিল্লিকে দরকার। আমরা আছি, দিল্লিও আছে। দিল্লি আছে, আমরাও আছি। শত্রুতা কারও সঙ্গে নেই, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। শেখ হাসিনা সবার সঙ্গে ভারসাম্য করে ফেলেছেন। আর কোনো চিন্তা নেই? যথাসময়ে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।

‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ। সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। বক্তৃতা করেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজি, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এমপি, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমা আকতার ভূঁইয়া লাবণ্য, হাবিবুর রহমান, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন দয়াল, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ইলোরা জাহান ইলোরা খান মজলিস, আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সোহানা জেসমিন মুক্তা, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অচিন কুমার মল্লিক, ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির মোল্লা প্রমুখ। এ সমাবেশে ধামরাই, সাভার, দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ মোট সাত উপজেলার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন বলে মঞ্চ থেকে জানানো হয়।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁদের সবার বক্তব্যই ছিল আগামী নির্বাচন ও বিরোধীদের এক দফার আন্দোলনকেন্দ্রিক। ‘খেলা শুরু’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে নেতারা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠ নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দেন। ভিসানীতির হুমকি-ধমকি শেষ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসানীতির পরোয়া করি না। আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তাহলে কেন ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসবে না। ফখরুলের (বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) গলার আওয়াজ নরম হয়ে গেছে।

বিএনপি নেতারা এখন পথ হারিয়ে দিশাহারা মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির দম ফুরিয়ে গেছে। বিএনপির কত হুমকি। এখন অক্টোবর চলে যাচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বুড়িগঙ্গায় পড়ে গেছে। নির্বাচন ছাড়া জনগণ এ মুহূর্তে আর কিছুই চায় না। এখন ভোট হলে শতকরা ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেবে। অক্টোবর থেকে খেলা শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে সেমিফাইনাল। জানুয়ারিতে ফাইনাল। বিএনপি এখন ফাউল করছে। ফাউল করলেই হলুদ কার্ড, লাল কার্ড। ফাউল করা চলবে না। ফাইনাল খেলার জন্য তৈরি হয়ে যান। অক্টোবরে নাকি সরকারের পতন। কোন বছরের অক্টোবরে? নভেম্বরে-ডিসেম্বরেও কিছুই হবে না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নির্বাচনের আগেই জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম চলে আসবে। চিন্তা করবেন না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাহস থাকলে ঢাকায় মাঠে এসে মায়ের অসুস্থতার জন্য আন্দোলনের ডাক দাও। তারেক রহমান মুচলেকা দিয়েছিল, আর রাজনীতি করবে না। আরে কাপুরুষ, সাহস থাকলে বাংলার মাটিতে আয়। মায়ের অসুস্থতার জন্য আন্দোলন করবি তো ঢাকার মাঠে এসে আন্দোলনের ডাক দাও। সাহস না থাকলে আন্দোলনের কথা বলো? কাপুরুষের আন্দোলন কোনোদিনও সফল হবে না। তুমি নিজেই পালিয়ে আছ, আবার বলছ, আওয়ামী লীগ নাকি পালিয়ে যাবে? কোথায় পালাব? এত সুন্দর সুন্দর রাস্তা। গাজীপুরের দিকে সাড়ে চার কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কি সুন্দর! ওইটাও হয়ে যাচ্ছে। রংপুরের দিকে যাবেন তো সব ফোর লেন সড়ক। গাজীপুরেই ফ্লাইওভার আছে ৬টা। বিআরটি (বাস র?্যাপিড ট্রানজিট) আগামী বছর খুলে যাবে। আর কী করবে শেখ হাসিনা? জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি! বিএনপি জামায়াত এ শান্তি ও উন্নয়নকে মেনে নিতে পারে না। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে সাংবিধানিক পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। যারা বাধা দিতে আসবে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।

অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা যখন ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি তখন বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে চাইছে।

তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়। গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চায়।

জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সবাইকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করতে হবে। যে কোনো কিছুর বিনিময় হলেও সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচনকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাইবে, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে এর মাধ্যমে বোঝা যায়, বাংলার মানুষ উন্নয়ন-অগ্রগতি চায়। বাংলার মানুষ শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আজকের শান্তি সমাবেশের লক্ষ্য আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার মসৃণ পথকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চায় সেই বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করা। আমরা আমাদের গণতন্ত্রের পথকে আরও পরিশীলিত করতে চাই। আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার মধ্য দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে চাই। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের উন্নয়নকে মেনে নিতে পারে না। নির্বাচনকে বিতর্কিত ও বানচাল করে স্বৈরশাসনের উত্থান ঘটাতে চায়। এদের গণতন্ত্র ও নির্বাচনবিরোধী রাজনীতিকে আমরা ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ সমাবেশ দিয়ে প্রতিহত করব।

মির্জা আজম বলেন, আগামী এক মাস এবং নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রাজপথে থেকে বিএনপির সরকার পতনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে সুখী, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করব।

সর্বশেষ খবর