বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাবেক দুদক কর্মকর্তা ও আইনজীবী সহকারী

হেফাজতে দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ

প্রতিদিন ডেস্ক

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দুজনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে পুলিশ হেফাজতে ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ নামে দুদকের সাবেক এক উপপরিচালক এবং বগুড়ায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬) নামে এক আইনজীবী সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছে তাদের পরিবার।

অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিজস্ব প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্য-

চট্টগ্রাম : মঙ্গলবার রাতে নগরের চান্দগাঁও থানা পুলিশ হেফাজতে ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহ নামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপপরিচালকের মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ( সিএমপি)। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘মারধর ও হুমকি-ধমকির অভিযোগে আদালতে দায়ের হওয়া একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ সিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত কমিশনার স্পিনা রানী প্রামাণিক বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তার মৃত্যু ঘিরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু অভিযোগ করা হয়েছে। তাই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অপেশাদার আচরণ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে ডিসি ডিবি উত্তরের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার উত্তর এবং সহকারী পুলিশ কমিশনার সিটি এসবি।’ চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়ারেন্টমূলে ছৈয়দ মো. শহীদুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। গ্রেফতারকারী কর্মকর্তারা তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতেন না। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে যথাযথ সম্মান দিয়ে ওনাকে ওসির রুমে বসানো হয়। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ডাকা হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হওয়ায় সিএনজিতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ বগুড়া : জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৩৬) নামের এক আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাবিবের পরিবারের দাবি, ডিবি পুলিশের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়া জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের সামনে থেকে ডিবি পুলিশ হাবিবুরকে আটক করে। ভিকটিম জেলার শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে এবং জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক। এদিকে পুলিশ বলছে, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে কার্যালয়ে আনার পরপরই তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়। তাকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

 বগুড়া ডিবি সূত্রে জানা যায়, আটকের পর হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাবিবুরের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলের মর্গে নেওয়া হয়। সূত্র আরও জানায়, গত ২ আগস্ট শাজাহানপুর থানার জোড়া গ্রামে ৮০ বছর বয়সী খুকি বেওয়া নিখোঁজ হন। গত ৪ আগস্ট গ্রামের একটি পুকুরে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে এলাকাবাসী। এ সময় লাশের দুই পা বিচ্ছিন্ন করা হলেও লাশ উদ্ধারের সময় একটি পা পাওয়া যায়নি। এরপর একই গ্রামের মনোয়ারা বেওয়ার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে খুকি বেওয়ার বিচ্ছিন্ন একটি পা উদ্ধার করা হয়। ডিবি পুলিশ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। হাবিবুর ২০১৩ সালে খুকি বেওয়ার সৎ ছেলে বিপুল হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। ওই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষী ছিলেন খুকি বেওয়া। মৃত হাবিবুরের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ডিবি পুলিশ সাদা পোশাকে বিনা পরোয়ানায় হাবিবুরকে আটক করে নিয়ে যায়। তার খোঁজ করতে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে এক সিনিয়র আইনজীবী নিশ্চিত করেন হাবিবুর ডিবি পুলিশের হেফাজতে আছেন। কিছুক্ষণ পর তিনিই আমাকে হাবিবুরের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তার মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে এসে হাবিবুরের লাশ পাওয়া যায়।

আইনজীবী মঞ্জুরুল হক জানান, হাবিবুর সারা দিন সুস্থভাবে আমার অফিসে কাজ করেছেন। ডিবি পুলিশ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার জানান, একটি হত্যা মামলায় হাবিবুরের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়ে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তবে কার্যালয়ে আনার পরপরই তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিবুরের মৃত্যু হয়েছে। তাকে নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, ডিবি পুলিশ হাবিবকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তবে দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসায় রাত পৌনে ৯টার দিকে হাবিবুরের মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ খবর