শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলে গেলেন কবি আসাদ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন কবি আসাদ চৌধুরী

সাহিত্যাঙ্গনে শোকের ছায়া ফেলে, কবিতাপ্রেমী ভক্তদের বেদনার সাগরে ভাসিয়ে, না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ‘কোথায় পালালো সত্য’ সন্ধানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী।

কানাডার টরেন্টোর আসোয়া লেকরিচ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের অন্যতম প্রধান এই কবি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত বছরের নভেম্বর থেকে তিনি ব্লাড ক্যান্সার, কিডনি জটিলতা, শ্বাসকষ্টসহ নানা বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন কবি। তারা টরেন্টোতেই বসবাস করেন। কবির ইহলোক ছেড়ে পরলোকে চলে যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন কবিপুত্র জারিফ চৌধুরী। সন্ধ্যায় এই শোক রিপোর্ট লেখার সময় কবির লাশ দেশে আনা এবং দাফনের বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ার সম্ভ্রান্ত মুসলমি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আসাদ চৌধুরী। তাঁর পিতার নাম আরিফ চৌধুরী ও মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। আসাদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে পেশা জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতার পর সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন বাংলা একাডেমিতে চাকরি করে তিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। কবি আসাদ চৌধুরী একাধারে ছিলেন অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, শিশু সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার ও উপস্থাপক।

১৯৭৫ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘তবক দেওয়া পান’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে এ দেশের সাহিত্য ভুবনে আলোড়ন তোলেন আসাদ চৌধুরী। এরপর কবিতার অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাঁর বেশি বেগ পেতে হয়নি। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন আসাদ চৌধুরী। এর আগে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৭)-সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। ১৯৮৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জীবনীগ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’ সম্পাদনা করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান এই কবি। মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৮৩ সালে তিনি রচনা করেন ইতিহাসবিষয়ক বই ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- তবক দেওয়া পান (১৯৭৫), বিত্ত নাই বেসাত নাই (১৯৭৬), প্রশ্ন নেই উত্তরে পাহাড় (১৯৭৬), জলের মধ্যে লেখাজোখা (১৯৮২), যে পারে পারুক (১৯৮৩), মধ্য মাঠ থেকে (১৯৮৪), মেঘের জুলুম পাখির জুলুম (১৯৮৫), আমার কবিতা (১৯৮৫), ভালোবাসার কবিতা (১৯৮৫), প্রেমের কবিতা (১৯৮৫), দুঃখীরা গল্প করে (১৯৮৭), নদীও বিবস্ত্র হয় (১৯৯২), টান ভালোবাসার কবিতা (১৯৯৭), বাতাস যেমন পরিচিত (১৯৯৮), বৃন্তির সংবাদে আমি কেউ নই (১৯৯৮), কবিতা-সমগ্র (২০০২), কিছু ফল আমি নিভিয়ে দিয়েছি (২০০৩), ঘরে ফেরা সোজা নয় (২০০৬) ইত্যাদি। আসাদ চৌধুরী অনূদিত গ্রন্থগুলো হলো- বাংলাদেশের উর্দু কবিতা (২০০০) এবং প্যালেস্টাইন ও প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদী কবিতা (২০০৫)। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আসাদ চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলো হলো- আবুল হাসান স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৫), অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), বরিশাল বিভাগীয় স্বর্ণপদক, অশ্বিনী কুমার পদক (২০০১), জীবনানন্দ দাশ পদক, অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (২০০৬), বঙ্গবন্ধু সম্মাননা ১৪১৮ প্রভৃতি।

সর্বশেষ খবর