শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তৃণমূল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকারকে শীর্ষ দুটি পদে রেখে আংশিক কমিটি ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপিরই সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত তৃণমূল বিএনপি। কিছু দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার পর সারা দেশ সফরে বের হবেন দলটির নেতারা। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার সাবেক নেতাদের দিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ভোটে অংশ নেবে না দলটি। এ লক্ষ্যে মাঠে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এদিকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ভোটে না গেলে কিংবা ভোটে গেলেও মনোনয়নবঞ্চিত শতাধিক নেতা তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। সব মিলিয়ে বিএনপিতে এখন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির সাবেক দুই নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের দিন বলেছেন- বিএনপি একটা বিশাল প্রবহমান নদীর মতো। সেখানে কত খড়কুটো আসে, কত খড়কুটো যায়। তাতে বিএনপির কিছু যায় আসে না। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর স্মরণসভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, বিএনপির দলছুটদের নিয়ে দল ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দল কখন ভাঙতে যায়, অন্য প্রতিপক্ষ যখন নিজে দুর্বল হয়। সবল থাকলে তো এটা করবে না। আজকে সেজন্য আমাদের দলছুট, বহিষ্কৃত লোকজন নিয়ে আবার দল তৈরি করে ঝামেলা করতে চায়।

তৃণমূল বিএনপিতে উল্লেখযোগ্য কেউ যোগ দিচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সামনে আমাদের নীতি ও আদর্শে সাড়া দিয়ে অনেকে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই থেকে আড়াই শ আসনে ভোট করবে। মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার জানিয়েছেন, বিএনপিসহ প্রধান তিনটি দলের নেতারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সামনে চমক আছে। জানা যায়, বিএনপি থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছে- এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপির ভিতর। শুধু কেন্দ্রীয় নেতা নন, বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা এমনকি বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে যেসব নেতা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের একটি বিরাট অংশ তৃণমূল বিএনপিতে যেতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি থেকে সাম্প্রতিক বহিষ্কৃত বেশ কয়েকজন নেতার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির মধ্যে যেসব নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান এবং এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা আছে তাদের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। এই সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। বিএনপি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের বহিষ্কৃত নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও স্বীকার করেছেন, তাদের সঙ্গে এখন তৃণমূল বিএনপির যোগাযোগ বাড়ছে। হঠাৎ করেই তৃণমূল বিএনপির যোগাযোগের কারণ হিসেবে বিএনপির একটি অংশ বলছে, দলে উপেক্ষিত নেতাদের নতুন দলে নিতেই যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে চায় এমন নেতারা মনে করছেন, দাবি আদায় না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কোনো অবস্থাতেই অংশ নেবে না। আর এ কারণেই তারা তৃণমূল বিএনপিতে গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাকে নিরাপদ মনে করছেন। এ নির্বাচনে তারা ভালো ফলাফল করবেন এমনটি প্রত্যাশা করছেন।

অন্যদিকে বিএনপির অতি আত্মবিশ্বাসীরা বলছেন, এটা আসলে সরকারের পাতানো ফাঁদ। সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন বিএনপিকে ছাড়াই করতে চায়। বিভিন্ন মহলের কাছে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে চায়। আর এ কারণেই তৃণমূল বিএনপিকে চাঙা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা যদিও বলছেন, তৃণমূল বিএনপি নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তবে বর্তমান বাস্তবতায় দলটিতে যে উদ্বেগ রয়েছে তা তাদের সঙ্গে আলাপ করলে বোঝা যায়। এ কারণে এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিএনপি। তৃণমূলের প্রথম কাউন্সিল হওয়ার আগে বিএনপির অনেক নেতাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনেককে আবার পদায়ন করা হয়েছে। বহিষ্কৃতদের দলে ফেরত আনার আলাপ-আলোচনা চলছে। বঞ্চিত-উপেক্ষিতদের দলে সমন্বয় করার প্রক্রিয়াও চলছে। 

তৃণমূল বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সারা দেশে দলটিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বিএনপির জনশক্তিই তাদের প্রথম টার্গেট। বিএনপি যদি নির্বাচনে না যায় কিংবা নির্বাচনে গেলেও যারা মনোনয়ন পাবেন না, যারা কোনো পদ পাবেন না, তাদের মধ্যে অনেকেই তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপির এরকম অনেকেই তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বিএনপির মনোনয়নে অতীতে সংসদ সদস্য হয়েছেন এবং সামনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম, এরকম ১৭ জন এরই মধ্যে তৃণমূলে যোগদানের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা চলছে।

জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলছেন, রাজনৈতিক দলের অনেকেই যোগাযোগ করছেন। তাদের নাম এখনই বলা যাবে না। সময় যত যাবে ততই স্পষ্ট হবে কারা আমাদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর