শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জনশক্তি রপ্তানিতে শীর্ষে কুমিল্লা রেমিট্যান্সে ঢাকা

শামীম আহমেদ

১৭ বছরের বেশি সময় ধরে জনশক্তি রপ্তানিতে এগিয়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলা। প্রতি বছর কাজ নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া মোট জনশক্তির অন্তত ১০ শতাংশই এই জেলার। তবে রেমিট্যান্স গ্রহণে বরাবরই শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। জনশক্তি রপ্তানিতে অবদান ৩ শতাংশ হলেও রেমিট্যান্সের ৩০ শতাংশের বেশি আসছে ঢাকায়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্রই সামনে এসেছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯১ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ গেছেন কুমিল্লা থেকে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ৭ লাখ ২৬ হাজার মানুষ। ২০২১ সালে বিদেশ যান ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন। কুমিল্লা থেকেই যান সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ১৬৭ জন। ২০২২ সালে মোট বিদেশ যান ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন। শুধু কুমিল্লা থেকে যান ১ লাখ ৫ হাজার ৯৯৭ জন, যা মোট কর্মসংস্থান হওয়া বাংলাদেশির ৯.৩৩ শতাংশ। ঢাকা জেলা থেকে যান মাত্র ৩৪ হাজার ৩৮৭ জন, যা কর্মসংস্থান হওয়া মোট বাংলাদেশির ৩ শতাংশের সামান্য বেশি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে গেছেন ৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৬ জন। কুমিল্লা থেকে গেছেন সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ২৭ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে গেছেন ৩০ হাজার ৭৮৭ জন। সেখানে ঢাকা জেলা থেকে গেছেন ১৬ হাজার ৩৩৪ জন।

তবে কর্মসংস্থানে কুমিল্লা শীর্ষে থাকলেও সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ঢুকছে ঢাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের পাঠানো মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৩৩ শতাংশ আসছে ঢাকা জেলায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪ হাজার ৯১৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় ঢুকেছে ১ হাজার ৬৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। কুমিল্লায় ঢুকেছে মাত্র ২৮০.২ মিলিয়ন ইউএস ডলার। চট্টগ্রামে ঢুকেছে ৪০৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মোট রেমিট্যান্স আসে ২১ হাজার ৬১০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এর মধ্যে ঢাকা জেলাতে আসে ৬ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। কুমিল্লায় আসে ১ হাজার ২৮৫ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। চট্টগ্রামে আসে ১ হাজার ৬১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। একই ধারাবাহিকতা ছিল আগের অর্থবছরেও। এ ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ সারির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে একাধিক বিষয় উঠে আসে। তাদের মতে, প্রবাসীদের বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছে। এই টাকাগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকছে না। অন্যদিকে হুন্ডি তৎপরতা ও অর্থ পাচারে যুক্ত শীর্ষ ব্যক্তিরা ঢাকায় বসেই নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করেন। ঢাকায় রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে এর ভূমিকা থাকতে পারে। এ ছাড়া দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের একটি অংশ রেমিট্যান্স আকারে রাজধানীতে ফিরছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

সর্বশেষ খবর