সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তৃণমূলে ভোটের হাওয়া

রফিকুল ইসলাম রনি

তৃণমূলে ভোটের হাওয়া

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এক মাস বাকি থাকলেও তৃণমূল আওয়ামী লীগে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নির্বাচনী এলাকায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরছেন দলীয় নেতা-কর্মী, বর্তমান এমপি-মন্ত্রী, সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। তারা প্রতিদিন হাটবাজার, পাড়া-মহল্লায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে সরকারের উন্নয়ন বিবরণীর লিফলেট বিতরণ এবং সাংগঠনিক ইউনিটগুলোতে বর্ধিতসভা করে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মতবিনিময় করছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে পথসভা, উঠান বৈঠক ও জনসংযোগ করে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করছেন। জানা গেছে, আগামী মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভোট হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে এমপি-মন্ত্রীরা, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তৎপর হয়েছেন। এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গণসংযোগ করছেন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে নেতারা নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আগ্রহী প্রার্থীরা ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে গোটা এলাকা ছেয়ে ফেলেছেন। নিয়মিত গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান দিচ্ছেন। জানা গেছে, সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলীয় প্রধানের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বর্তমান সংসদের এমপি-মন্ত্রীরা এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করছেন। এর মধ্যে অন্যতম রয়েছে- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পারমাণবিক যুগে বাংলাদেশের যাত্রা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখো অসহায় পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া, দেশব্যাপী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায় প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী, বয়স্ক মানুষকে ভাতা প্রদান, শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কী পরিস্থিতি ছিল? টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ কী কী উন্নয়ন করেছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। দলীয় প্রধানের নির্দেশে আমরা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা এবং এমপি রয়েছি তারা কাজ করছি। একই সঙ্গে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, নারী সমাবেশ করছেন। ভোট পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের মন জয় করে আগামীতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে।’ বর্তমান সরকারের অধীনে ভোট করতে চায় না মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। সে কারণে তারা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। বিএনপির রোডমার্চ, প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিলের বিপরীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। ঢাকাসহ সারা দেশেই এই শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন তারা। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী নির্বাচনী এলাকার জেলা সদর ও সুবর্ণচরে নিয়মিত গণসংযোগ, কর্মিসভা, পথসভা করছেন। তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে দেশের পরিস্থিতি কী সেটাও তুলে ধরছেন। একইভাবে উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রায় নিয়মিত এলাকায় কর্মিসভা, পথসভা করছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী এলাকার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি স্থানীয় উন্নয়নগুলো তুলে ধরছি। নির্বাচনী এলাকায় ভোটের আমেজ শুরু হয়েছে। আমরা চাই বিএনপির অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।’ নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার এলাকা ফেনীর মানুষও ‘উন্নয়ন-অর্জনে’ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে চান।’ সংসদ অধিবেশন ছাড়া নিয়মিত এলাকায় থাকেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি জগলুল হায়দার। তিনি নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করেন। সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়ন ও নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জগলুল হায়দার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা আস্থা রেখে আমাকে নৌকা দিয়েছেন। আর এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। প্রয়োজন ছাড়া নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে যাই না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস যাই হোক, আমি সাধারণ মানুষের পাশে থাকি। কারণ এই সাধারণ মানুষই আমাকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। লাগাতার এলাকায় থাকায় মানুষের মধ্যে ভোটের আমেজ পাচ্ছি।’  সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমপি-মন্ত্রীরা ছুটে চলেছেন নির্বাচনী এলাকায়। নিয়মিত গণসংযোগ, কর্মিসভা, উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন। বিশেষ করে এখন দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে টানছেন। দীর্ঘদিন উপেক্ষিত নেতা-কর্মীদের এখন কদর বেড়েছে। এমপি-মন্ত্রীদের পাশাপাশি পিছিয়ে নেই সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। উপজেলা চেয়ারম্যানরাও এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তারা নিয়মিত কর্মিসভা, পথসভা করে চলেছেন। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে নৌকা পেতে চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ সুন্দর ফুলটাই আমি বেছে নেব’। সে কারণে আমরা শক্তি পাই। এলাকায় গণসংযোগ, সরকারের উন্নয়ন প্রচার করছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নেত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি।’ এমপি-মন্ত্রীদের সন্তানরাও পিতার উত্তরসূরি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিশেষ করে প্রয়াত এমপি-মন্ত্রীদের সন্তানরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। পাবনা-৪ আসনের টানা পাঁচবারের এমপি, ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামসুল শরীফ ডিলুর ছেলে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। তিনি এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। এ প্রসঙ্গে গালিবুর রহমান শরীফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার প্রয়াত পিতা পাবনা-৪ আসনের পাঁচবারের এমপি ছিলেন। মন্ত্রী হয়েছিলেন। এলাকার মানুষ তাকে মিস করেন। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও বাবার অনুসারীরা তাদের নেতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে আমাকে প্রত্যাশা করেন। সে কারণেই এলাকায় গণসংযোগ করছি। মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি। সর্বত্র ভোটের আমেজ বিরাজ করছে।’

গ্রামগঞ্জের হাটবাজার, চা স্টল, সেলুন কিংবা খাবারের হোটেলেও আলোচনা হচ্ছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন তাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বর্তমান এমপিরা থাকছেন নাকি নতুন মুখ আসছে। অনেক নির্বাচনী এলাকায় এখন কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতা-কর্মীরা। বর্তমান এমপিদের সঙ্গে একটি পক্ষ, আবারও কিছু পক্ষ নতুন নতুন মুখের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। বর্তমান এমপিরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরনো, ত্যাগী নেতাদের খোঁজখবর নেওয়াসহ কর্মী-সমর্থকদের সপক্ষে ভেড়াতে। সব মিলিয়ে তৃণমূলে পুরোদস্তুর বইছে নির্বাচনী হাওয়া।

সর্বশেষ খবর