সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। নবীন কর্মকর্তাদের ’৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল সৈনিক আখ্যায়িত করে দেশের অব্যাহত ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ-সমাপনী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পাঁচটি প্রকল্প/কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন ও জিইএমএস সফটওয়্যার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনকে ‘মর্যাদা পদক’ বিতরণ করেন। ছয় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে তাহসিন বিনতে আনিস শীর্ষস্থান অর্জন করে রেক্টরস পদক লাভ করেন। প্রশিক্ষণকে দেশ ও জনগণের কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। কারণ তাদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরানো যে উপার্জন সেই উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের সবার সবকিছু চলে। এ কথাটা আমাদের ভুললে চলবে না। চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা। তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি বাস্তবায়নে নজরদারির পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করবে তাদের মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজও করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে, এসব খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। কাজেই তাদের কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের দেখতে হবে। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমার চাওয়া একটাই, একটাই স্বপ্ন, যেটা আমার বাবা এদেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আর তাদের জীবনমান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটা স্থায়ী হয় চলমান থাকে, সেটাই আমার একমাত্র দাবি সবার কাছে। দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি তার থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে, আমি বলছি রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে ততক্ষণ আমরা চিন্তা করি না। দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার জন্য তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ফসল ফলাব, নিজের খাবার নিজেরা খাব, কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করব। কিন্তু আমার নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে। তিনি বলেন, ’৪১-এর বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখন তো আর আমরা থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আমি শুধু সেটাই চাই।  সরকারের বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিলের কথা উল্লেখ করে বলেন, মেধা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য মেধাবীদের আমরা সহযোগিতা দিয়ে যাব। কারণ এ মেধাগুলোই আমার দেশের উন্নয়নের কাজে লাগবে। ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির এই যুগে বিশ্বে বাজার খুঁজে বের করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিটি উন্নয়ন কর্মকান্ড টেকসই করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মাঠপর্যায়ে কাজ করবেন প্রতিটি এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের দেখতে হবে নদী-নালা-খাল-বিলসহ জলাধারগুলো যেন সেখানে সংরক্ষিত থাকে। অবকাঠামো নির্মাণ ও রাস্তাঘাট করার সময় সেটা যেন ঋতু বৈচিত্র্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। যাতে কোনো সময় কোনো কিছুতে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। জিয়াই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথকে রুদ্ধ করেছিল। আর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল। তিনি বলেন, সেদিন জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা আপনজন হারিয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশ হারিয়েছিল তাদের ভবিষ্যৎ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার মানসিকতা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক রকম প্রতিবন্ধক আসবে। কারণ আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয় না, দেশের ভিতরেও আছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বা ’৭৫-এর খুনি বা তাদের সন্তান-সন্ততি যারা রয়েছে, তারা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধা দেবে। সেই শত বাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম (গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস), ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, নবনির্মিত টাঙ্গাইল সার্কিট হাউস, নবনির্মিত কুমিল্লা সার্কিট হাউস এবং বিপিএটিসির ১৫ তলা আধুনিক ডরমেটরি ভবন।

সর্বশেষ খবর