বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বাচনের খুঁটিনাটি জানলেন মার্কিনিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের খুঁটিনাটি জানলেন মার্কিনিরা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া, নির্বাচন আইন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমসহ খুঁটিনাটি বিষয় জানলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রতিনিধিরা। সেই সঙ্গে সরকারের ভূমিকা, নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণসহ বেশি কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশন ‘অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ’ করতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের সামনে তুলে ধরেছে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে।

 ইসির তরফ থেকে বৈঠকে তাদের বিস্তারিত জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল ফোকাসটা হচ্ছে ফ্রি, ফেয়ার, পার্টিসিপেটরি, পিসফুল ইলেকশন।... প্রতিনিধিরা যা যা জানার সব জেনেছেন; আমরা বোঝাতে পেরেছি। এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন অবজারভার টিম পাঠাবেন কি পাঠাবেন না। পাঠালে কবে পাঠাবেন।’ বৈঠকে ইসি সরকারের ভূমিকাসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান সিইসি। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া, নির্বাচনী আইনসহ ভোটের দায়িত্ব থাকা নির্বাচনী কর্মকর্তা, মাঠপ্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং নির্বাচনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে দেখভাল করা হয় সেই বিষয় জানতে চেয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইসি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান; এ জন্য বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একাধিকবার সংলাপ করেছে। ইসি মনে করে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বাচনী মাঠে ভারসাম্য তৈরি হয়। কিন্তু কোনো কোনো দল ইসির ডাকে সারা দেয়নি। তবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিনিধি দল কোনো মন্তব্য করেনি। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দল নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। সিইসি নির্বাচনের তফসিল থেকে শুরু করে ভোট গ্রহণ ও গেজেট পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন। ইসির আইনি সক্ষমতা সম্পর্কে প্রতিনিধিদের সিইসি বলেছেন, ভোটে কোনো সমস্যা তথা সিল মারা বা কারচুপি হলে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ বন্ধ করার ক্ষমতা রাখেন। এমনকি মিডিয়ার কর্মীরাও ভোটকক্ষ পরিদর্শন করেন; ছবি তুলতে পারেন। ভোট গণনার সময় প্রার্থী বা তার এজেন্টরা থাকতে পারেন। ফলাফল প্রকাশের আগে বিবরণীতে এজেন্টদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ভোট কেন্দ্রেই ফলাফল টানানো হয়। প্রতিনিধিরা নির্বাচনকালীন সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং তাদের কর্মকান্ড বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশনের প্রতিনিধিরা। সিইসি বলেছেন, আইন অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ইসির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ব্রিফিং করা হয়। এ ছাড়া সরকার ইসিকে সব ধরনের সহায়তা করার আশ্বাস দিচ্ছে বলে জানান সিইসি।

প্রতিনিধি দল রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চায়। এ বিষয়ে সিইসি পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করেছেন। বলেছেন, ইসির প্রক্রিয়ায় নিবন্ধনে কেউ সন্তষ্ট না হলে আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তারা প্রার্থী বা দলের নির্বাচনী ব্যয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সিইসি বলেছেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রার্থীদের ব্যয় বিবরণী ইসিতে দাখিল করার আইন রয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলটি ইসিকে বলেছে- তারা মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আসেননি। তারা এখানে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তারা দেশে যাওয়ার আগে বা তাদের দেশে গিয়ে একটি ব্রিফ করবে।

অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনেই মনোযোগ : সিইসি

বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল ফোকাসটা হচ্ছে ফ্রি, ফেয়ার, পার্টিসিপেটরি, পিসফুল ইলেকশন।... প্রতিনিধিরা যা যা জানার সব জেনেছেন; আমরা বোঝাতে পেরেছি। এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন অবজারভার টিম পাঠাবেন কি পাঠাবেন না। পাঠালে কবে পাঠাবেন।

গতকাল বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দলটি এসেছে মূলত প্রিঅ্যাসেমেন্টের জন্য। তারা কী করবে আমরা জানি না। আমাদের কাছে যে প্রশ্নগুলো করেছে, আমাদের ইলেকশন কমিশনের রুল, দায়িত্ব, কর্মকান্ড সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। আমরা সব বোঝাতে পেরেছি।’ বৈঠকে ইসি, সরকারের ভূমিকাসহ নির্বাচন প্রক্রিয়ার সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘ইসি কী রোল প্লে করে, গভার্নমেন্টের রুল কতটুকু, কীভাবে প্লে করে; সরকারের সঙ্গে ইলেকশন কমিশনের কো-অর্ডিনেশন কীভাবে হয়, যার মাধ্যমে পুরো ইলেকশন প্রসেসটা তুলে নিয়ে আসি- তাদেরকে জানিয়েছি। তারা যা যা জানতে চেয়েছেন, জেনেছেন। এখন জেনে কী করবেন আমরা জানি না। পরে হয়তো দেশে ফিরে গিয়ে এটা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা কোনো অবজারভার টিম পাঠাবেন কি পাঠাবেন না, পাঠালে কীভাবে পাঠাবে।’ আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষণ দলও গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে এসেছিল। ‘বাজেট স্বল্পতার কারণে’ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে তারা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি যাচাই করতে শনিবার ঢাকায় পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বসার আগে তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দফতর, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম এবং ঢাকার বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গেও তাদের বসার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে এই সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করছে। সফর শেষ হলে এই পর্যবেক্ষণ দলের তরফ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে তাদের যদি কোনো উদ্বেগ থাকে, তা জানানোর পাশাপাশি সুপারিশ থাকলে তাও তারা জানাবে।

সর্বশেষ খবর