বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফিলিস্তিনে শুধুই আর্তনাদ, কমেনি যুদ্ধের তীব্রতা

প্রতিদিন ডেস্ক

ফিলিস্তিনে শুধুই আর্তনাদ, কমেনি যুদ্ধের তীব্রতা

ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন প্যালেস্টাইনিয়ান আল আকসা মার্টিরস ব্রিগেডসের যোদ্ধারা। পশ্চিমতীর ইসরায়েলের দখলে রয়েছে। তবু সেখানে এই ব্রিগেডের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত। অনলাইন আল জাজিরা বলেছে, এই বিগ্রেড থেকে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে। গ্রুপটির টেলিগ্রাম অ্যাপে দেওয়া ধারাবাহিক বার্তায় বলা হয়েছে, নাবলুসে তাদের যোদ্ধারা সরাসরি টার্গেট করেছে ইসরায়েলি বাহিনীকে। জেনিনে ইসরায়েলি যানকে টার্গেট করা হয়েছে। এদিকে গাজায় মুহূর্তের মধ্যে বেড়ে যাচ্ছে নিহতের সংখ্যা। হাসপাতালে লাশ। ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশ। মৃতদেহ এবং আহতদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না হাসপাতালে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীর মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আহত এসব মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোর জন্য জরুরি মেডিকেল সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে নিরাপদ করিডর উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। সোমবার দিবাগত রাতে গাজার খান ইউনুসে চারটি অ্যাম্বুলেন্সকে টার্গেট করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। বেইত হানুনেও বোমা হামলা করা হয়েছে। এর ফলে শহরটিতে একটিমাত্র হাসপাতাল সেবা দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিশোধের হামলা সবেমাত্র শুরু। অর্থাৎ এর চেয়েও ভয়াবহ হামলা অপেক্ষা করছে। নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যসহ সব রকম মৌলিক সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে ওই শহরে বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির অবস্থা অকল্পনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলাদা এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাস্থ্য সেবাখাত সচল রাখার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। এতে অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গাজা উপত্যকার চারপাশে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের প্রায় ১ হাজার ৫০০ মৃতদেহ পাওয়া গেছে। গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। চলছে আকাশপথে হামলা। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিচার্ড হেচট সাংবাদিকদের বলেন, গাজা উপত্যকার চারপাশে প্রায় ১ হাজার ৫০০ হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে। গাজার সঙ্গে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ কম-বেশি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত থেকে কাউকে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে এখনো অনুপ্রবেশ ঘটছে। তার এ উদ্ধৃতি দিয়ে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে আরও বলা হয়, শনিবার সকালে রকেট হামলার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত অতিক্রম করে হামাসের অনেক যোদ্ধা ইসরায়েলে প্রবেশ করে। তাদের হামলা এবং একসঙ্গে রকেট হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। জবাবে ইসরায়েল গাজায় হামাসকে টার্গেট করে আকাশপথে এবং স্থলপথে অবিরাম বোমা মারছে। তাতে উপকূলীয় গাজায় কমপক্ষে ৬৮৭ জন নিহত হয়েছেন। বেসামরিক ব্যক্তিদের টার্গেট করা হলে ইসরায়েলি জিম্মিদের হত্যা করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে হামাস। একই সঙ্গে সেই দৃশ্য প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ওদিকে গাজায় অ্যাপার্টমেন্ট, মসজিদ, হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন ইতালি, থাইল্যান্ড, ইউক্রেনের নাগরিকরাও। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, গাজায় অবিরত হামলার মধ্যেও হামাস ঘোষণা দিয়েছে- সতর্কতা দেওয়া ছাড়া ফিলিস্তিনিদের একটি বাড়িতে একটি ইসরায়েলি বোমার বিপরীতে একজন করে ইসরায়েলি জিম্মিকে হত্যা করা হবে। ওদিকে এরই মধ্যে উভয় পক্ষে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৫০০ অতিক্রম করেছে। যদিও ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, গাজার চারপাশে ১ হাজার ৫০০ হামাস যোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। গাজায় একদিকে যেমন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল, তেমনি বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য এবং জ্বালানিতে পুরোপুরি ব্লকেড বা অবরোধ দিয়েছে। অস্বাভাবিকভাবে তারা ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে তলব করেছে। ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, যে কোনো সময় ভয়ঙ্করভাবে গাজায় স্থল অভিযান শুরু হতে পারে। ইসরায়েলের টিভি চ্যানেলগুলো বলছে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে। কমপক্ষে ২ হাজার ৬০০ মানুষ আহত হয়েছেন। কয়েক ডজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৬০ জনই তরুণ ও যুবক শ্রেণির ইসরায়েলি।

সর্বশেষ খবর