শিরোনাম
বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ধীরগতির শহর ঢাকাকে সচল করার উদ্যোগ

ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধীরগতির শহর ঢাকাকে সচল করার উদ্যোগ

রাজধানীর তীব্র যানজট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছে পুলিশ। বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির এই শহরকে সচল করতে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সব ট্রাফিক বিভাগকে কমিশনারের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। এর বাইরেও যানজট নিরসনের জন্য উপযুক্ত মনে করলে সদর দফতরের অনুমতিসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগগুলো স্বতন্ত্র উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে পারবে। নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। এর বাইরে যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে কোনো বিভাগে অভিনব কোনো আইডিয়া আসলে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে তা শেয়ার করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ডিএমপি সদর দফতরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন-সংক্রান্ত একটি সভায় এই নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিগগিরই ঢাকার রাস্তায় নতুন দৃশ্য দেখা যাবে বলে আমরা আশা করছি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ যানজট নিরসনে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। যানজট নিরসনে অভিনব কোনো আইডিয়া এলে তা সদর দফতরকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাজধানীর সব বাস স্টপেজ বা বাস-বের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাস স্টপেজ বা বাস-বের বাইরে কোনো বাস দাঁড় করানো যাবে না। রাস্তার মোড়গুলো ফ্রি রাখতে হবে। যেখানে পার্কিং নিষেধ সেসব মোড়ে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ইত্যাদি কোনো যানবাহন দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। যেসব রাস্তায় রিকশা চলাচলের অনুমতি নেই, সেখানে রিকশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আন্তজোন বা বিভাগকেন্দ্রিক প্রোপার রেশনিং এবং কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুই বা ততধিক জোন কিংবা বিভাগগুলোকে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফ্লাইওভারের মুখে বাসযাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখ জটলামুক্ত রাখতে হবে। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই মূল রাস্তার ওপর হকার বা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসতে দেওয়া যাবে না। বহিরাগত জেলা বা মেট্রোর কোনো সিএনজি বা যানবাহন ঢাকা শহরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ভারী যান (দেড় টনের বেশি ওজনবিশিষ্ট) নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে ঢাকা মহানগরীতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে যথাযথ বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। রেকারিং যথাযথভাবে করতে হবে। আন্তজেলা রুটের বাস ঢাকা মহানগরীর ভেতর দিয়ে অযাচিতভাবে যত্রতত্র চলতে দেওয়া যাবে না। সব রাস্তার বাম লেন অত্যাবশ্যকভাবে সচল রাখতে হবে। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিতে হবে। ট্রাফিকের সব পর্যায়ের সদস্যদের বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়, রাস্তায় টিআই, সার্জেন্ট এবং অন্যান্য ট্রাফিক সদস্যদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এডিসি ও এসি পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও সড়কে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে রোটেশন পদ্ধতিতে রাস্তায় বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ব্যবহার ও আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কারও সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা যাবে না। মামলা, রেকারিং এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সময় অবশ্যই বডিওর্ন ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে।

নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার মুশতাক আহমেদ। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, যানজট নিরসনের জন্য অনেক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাদেরও ইতিবাচক ভূমিকার বিশেষ প্রয়োজন। তবে আমরা আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে মাইক্রো লেভেলে কারণগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি। জানা গেছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৫২টি দেশের ১ হাজার ২০০টির বেশি শহরের যান চলাচলের গতি বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরোদু। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের দুই শহর ময়মনসিংহ (নবম) ও চট্টগ্রাম (১২তম) রয়েছে। যান চলাচলের এই ধীরগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলেছে, যানজটের কারণে ঢাকাবাসীকে প্রতি ২ ঘণ্টায় ৪৬ মিনিট সড়কে বসে কাটাতে হয়। বছরে জনপ্রতি গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অসহনীয় যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কয়েক শ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর