বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাই কোর্টে আদিলুর ও নাসিরের জামিন জরিমানা স্থগিত

বিচারপতির বক্তব্যে শপথ ভঙ্গ, বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে হাই কোর্টের বিচারক মো. ইমদাদুল হক আজাদ বলেছেন, ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা গতকাল আপিলের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ক শুনানিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন। পরে আপিল গ্রহণ করে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন পাশাপাশি জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন অভিযোগ করেন বিচারপতির এ ধরনের বক্তব্যে তার শপথ ভঙ্গ হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ অসাংবিধানিক বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। আমি প্রধান বিচারপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন বলেও জানান তিনি। বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৬ সালে একই সরকারের সময়ে হাই কোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

এক দশক আগের ঘটনায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের (আইসিটি) ৫৭ ধারার মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছর করে কারাদন্ড দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আপিল করে জামিন চান আদিলুর ও নাসির। গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে আদিলুর ও নাসিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মো. আহসানুজ্জামান ফাহিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে আদালত কক্ষে রাখা ডায়াসের (আইনজীবী যেখানে দাঁড়িয়ে শুনানি করেন) সামনে গিয়ে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তখন আদালত কক্ষে থাকা আসন (যেখানে আইন কর্মকর্তারা বসেন) থেকে দাঁড়িয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘তাদের (আপিলকারীদের) আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি আগেই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?...দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’ শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দেওয়া, অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।’ তাকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘তাহলে তাদের কম সাজা দিলেন কেন? তাহলে তো যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া উচিত ছিল। দুই বছর দিলেন কেন?’ এরপরে আদালত আদিলুর ও নাসিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জরিমানা স্থগিত ও জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য-বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় আদিলুর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গ্রেফতার হন। পরে তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ১১ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে অধিকারের কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে দুটি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। সে বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আদিলুর ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

সতর্ক করলেন প্রধান বিচারপতি : পরে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদকে গতকাল বিকালে নিজ কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদকে কথাবার্তার ক্ষেত্রে যত্নশীল হতে বলা হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সর্বশেষ খবর