বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বোমায় ধ্বংসস্তূপ গাজা মানবিক বিপর্যয়

দক্ষিণ লেবাননেও হামলা ইসরায়েলের

প্রতিদিন ডেস্ক

বোমায় ধ্বংসস্তূপ গাজা মানবিক বিপর্যয়

ফিলিস্তিনের গাজার দিকে লক্ষ্য করে অবিরাম গোলাবর্ষণ ইসরায়েলি বাহিনীর -এএফপি

ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে যুদ্ধের চতুর্থ দিনে আবারও ইসরায়েলি বিমান থেকে দফায় দফায় দক্ষিণ লেবাননে বোমা ফেলা হয়েছে। এদিকে ফসফরাস বোমাসহ অগণিত বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় গাজা অঞ্চলের মানবিক পরিস্থিতি ভয়াল রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, সেখানে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এদিকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনীকে সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সাজসরঞ্জাম পাঠানো শুরু করেছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, পার্স টুডে। একটি খবরে জানানো হয়েছে, গতকাল ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের জঙ্গিবিমানগুলো লেবাননের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর পর্যবেক্ষণ পোস্টে হামলা চালিয়েছে। সীমান্তের নিকটবর্তী দক্ষিণ লেবাননের ওই এলাকায় তারা গোলাবর্ষণও করেছে। ইসরায়েল জানায়, হিজবুল্লাহর রকেট হামলার জবাবে গতকাল তারা এসব হামলা চালিয়েছে।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের আভিভিম উপশহরে একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে। হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা দুটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সাঁজোয়া যানটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সামরিক যানে থাকা সব ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছে। ‘জেলদা’ টাইপের এ সামরিক যানে সাধারণত আটজন সেনা থাকে।

এ ছাড়া ইসরায়েলের আল আরামাশা এলাকার একটি সামরিক ঘাঁটিতে লেবানন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে আল মায়াদিন টিভি চ্যানেল খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী লেবানন সীমান্তের কয়েকটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে হামলা চালানোর পর হিজবুল্লাহ এভাবেই পাল্টা আঘাত হেনেছে। ইসরায়েলে টিভি চ্যানেল ‘ফোরটিন’ লেবানন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, তারা নিশ্চিত কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে, তবে সঠিক পরিসংখ্যান তাদের হাতে নেই। আরেক খবরে বলা হয়েছে, গাজা শহরের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জাবালিয়া শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি হ্রাসের কারণে এ ছিটমহলটির বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সংবাদসূত্রগুলো জানিয়েছেন, গাজাকে কয়েক শতাব্দী এবং মধ্যযুগীয় যুগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজা এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারণ গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে বাসিন্দারা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার চূড়ান্ত সতর্কবার্তা পান। এর এক ঘণ্টা পরই অন্ধকার হয়ে যায় সবকিছু। বিদ্যুৎ না থাকায় গাজার হাসপাতালগুলোকে এখন কেবল জেনারেটরের ওপর ভরসা করে চলতে হবে। সেটিও চালানো যাবে আর বড়জোর দুই থেকে চার দিন। এরপর শেষ হয়ে যাবে সব জ্বালানি। বিদ্যুৎ না থাকা অর্থ উপত্যকায় পানি সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বহুতল ভবনগুলোয় আর কাজ করবে না লিফট। ফলে গত রাতেই পুরোপুরি অন্ধকারে কাটানো শুরু হয়েছে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার। এদিকে ইসরায়েলি পাশবিকতার বিবরণ দিয়ে সংবাদসূত্রগুলো জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ওপর ইসরায়েলে চার দিনের পাশবিক বিমান হামলায় ১ হাজার ৫৫ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতের মধ্যে ২৩০ জন নারী এবং ২৬০ শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ৫ হাজার। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি সেনাদের তান্ডব চলছে এবং সেখানে আরও ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এরই মধ্যে গাজার মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, সংঘাত চলতে থাকলে সেখানকার পরিস্থিতি অবর্ণনীয় হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, গাজার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ আরোপের যে ঘোষণা ইসরায়েল দিয়েছে তাতে তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনের ছিটমহলে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রচ- বোমাবর্ষণে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জন তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসিএইচএ জানায়, বোমাবর্ষণে ১ হাজারের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৫৬০টি বাড়ি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলোয় আর বসবাস করা যাবে না।

অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র : ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যেই মিত্র ইসরায়েলকে প্রতিশ্রুত অস্ত্রসহায়তা দেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অস্ত্রবাহী প্রথম বিমানটি মঙ্গলবার গভীর রাতে দক্ষিণ ইসরায়েলের নেভাটিম বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে। এ বিষয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে ইসরায়েলের আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য গোলাবারুদ এবং ইন্টারসেপ্টর সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’ ফক্স নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন বিমানঘাঁটি থেকে ইসরায়েলে স্মার্ট বোমা নিয়ে গেছে মার্কিন বিমান বাহিনী। এ বোমার এক একটির ওজন ২৫০ পাউন্ড।

হামাসের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া : এক বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ হামাস বলেছে, ‘যে সময় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনারা গাজা ও পশ্চিম তীরের নিরীহ জনগণের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভূমিকার আমরা নিন্দা জানাই।’ হামাস বলেছে, বাইডেনের ভূমিকায় সংঘাত আরও বাড়বে।

সর্বশেষ খবর