শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নজরদারিতে সরকারি কর্মকর্তারা

সাখাওয়াত কাওসার

নজরদারিতে সরকারি কর্মকর্তারা

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চলছে বিশেষ নজরদারি। দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতেই এমন আয়োজন বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, দায়িত্বরত কর্মকর্তারা যাতে দেশি-বিদেশি চক্রের ফাঁদে পা দিতে না পারেন এবং কেউ দিয়ে থাকলে সরকারকে অবহিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে। তারা সরকারের উচ্চপর্যায়কে বিষয়টি অবহিত করবেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একটি উচ্চপর্র্যায়ের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিসহ নানা কারণে সরকারবিরোধী মঞ্চের নানা উসকানি সরকারকে এমন উদ্যোগ নিতে বাধ্য করছে। এরই মধ্যে অনেকের সাম্প্রতিক আমলনামাও উচ্চপর্যায়ে জমা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, টানা দেড় দশকে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি দিলেও কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতির বাইরে থেকে গেছেন। বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা যাতে সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো বৈঠকে না যান, সে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। অন্যদিকে সচিবালয়ের ভিতর এবং বাইরের কর্মচারী সংগঠনগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা নিশ্চিত করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। সূত্র আরও বলছে, সম্প্রতি বিরোধী দলের অনেক নেতা পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরির বিষয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সরকারের অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে নানা কানাঘুষাও হচ্ছে। এর বাইরে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে প্রশাসন এবং পুলিশের কর্মকর্তাদের মাঝে। কারণ তাদের অনেকেরই পরিবারের সদস্যরা যুুক্তরাষ্ট্রে, ইউরোপে পড়াশোনা এবং ব্যবসা এমনকি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। অন্যদিকে এমন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সরকারের পক্ষ থেকেও কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙা রাখার উপায় খোঁজা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে বারবার পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা যাতে নির্বাচন সামনে রেখে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রজাতন্ত্রে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা অতীতে সরকারের গুণকীর্তনে অস্থির থাকলেও বর্তমানে সুযোগ পেলেই তারা নানা মহলে সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছেন। হয়তো তাদের মতো কর্মকর্তাদের জন্যই বিশেষ নজরদারির আয়োজন হচ্ছে। একাধিক সূত্র বলছে, সন্দেহভাজনসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার গতিবিধি এমনকি তাদের সাইবার মনিটরিংয়ে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় উচ্চপর্যায়ের সেই বৈঠকে। তারা কাদের সঙ্গে কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে দেখা করতে কারা আসছেন, প্রয়োজন হলে তাদের ঘনিষ্ঠজনকেও নজরদারির আওতায় রাখার বিষয়ে মত দেন বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত অতি গুরুত্বপূর্ণ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ এবং প্রভাবশালী কর্মকর্তারা। এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশ এবং প্রশাসনে আরেক দফা রদবদল হচ্ছে। পুলিশ সুপার ও উপসচিব পদে পদোন্নতি আসছে। কতিপয় সচিবের অবসরজনিত কারণে রদবদল ছাড়াও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে এপিডির (অতিরিক্ত সচিব) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নতুন মুখ আসছে। মাঠ প্রশাসনের জেলা প্রশাসক পদে ৮-১০ জনকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এরই মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯তম ব্যাচের ১৯৫ জন কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার থেকে এপিডি এবং ৮-১০ জেলার ডিসিকে মাঠপর্যায় থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। গত ২ অক্টোবর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভায় এ সুপারিশ বিবেচনায় নেওয়া হয়। এসএসবির সভায় পদোন্নতির তালিকার বাইরে নিয়মিত ব্যাচ থেকে ১৯৫ জনকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো হয়। অবসরে পাঠানো দুই কর্মকর্তা হলেন- ঢাকায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক মো. আলমগীর আলম ও ঢাকা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মাহবুব হাকিম। এর আগে ১৮ অক্টোবর পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠায় সরকার। তারা হলেন- সিআইডির মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা এবং পুলিশ সদর দফতরের এসপি (টিআর) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী।

এরও আগে ১৬ অক্টোবর চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠায় সরকার।

সর্বশেষ খবর