শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে তৃণমূল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বিএনপির সাবেক কয়েকজন নেতার দল ‘তৃণমূল বিএনপি’। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের শীর্ষ নেতারা। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে দলটি। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে’ সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে একগুচ্ছ দাবিও তুলে ধরেছেন তারা।

গতকাল নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা বলেন দলটির নেতারা। বৈঠকে সিইসি বলেছেন, সরকারের সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হবে। সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সাংবিধাকিভাবে সরকার নিরপেক্ষ সহায়তা দিতে বাধ্য। অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন, সরকার আসলে নিরপেক্ষ হবে কি না। তিনি বলেছেন, ‘ইটস এ গেম। ইফ ইউ ডোন্ট প্লে ওয়েল তাহলে কিন্তু  জেতার প্রত্যাশা করা কঠিন। আপনাদের সকলকে, যারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, অবশ্যই সেখানে আপনার এজেন্ট থাকতে হবে। আমি কিন্তু ওখানে বসে আপনার ঘর পাহারা দিতে পারব না। ৪২ হাজার কেন্দ্র, ৩ লাখ বুথে একজন মানুষের পক্ষে বিভাজিত হয়ে কোটি কোটি হয়ে যেটা ফেরেশতারা পারেন। কিন্তু আমরা পারব না। মানবিক শক্তি দিয়ে যতটা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর্যবেক্ষণ করব’। এদিকে সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন সম্ভব নয় বলে তৃণমূলের দাবি তাদের সঙ্গে বৈঠকেই নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। অন্যান্য দাবির বিষয়ে বৈঠক শেষে কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব দল অংশগ্রহণ করবে, তাদের জন্য শুরু থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে কমিশন বদ্ধপরিকর। আইন এবং সংবিধানের আলোকে কমিশনকে যেসব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেসব ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে বলে কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে।

বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদাসহ ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শেষে শমসের মবিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ভোটে অংশ নিতে চাই। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু দাবি পেশ করেছি। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে আশার কথাও বলেন তিনি।

তৃণমূলের ১২ দাবি : সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তৃণমূল বিএনপি যেসব দাবি জানিয়েছে সেগুলো হলো- সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া প্রদত্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে- এ রকম প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকতে হবে। বিশেষ করে ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনও বদলিসহ প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। যদি কোনো দল বা প্রার্থী ন্যায্য দাবি বা অভিযোগ করে, দ্রুততম সময়ে তা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান করতে হবে। রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাজের বড় একটি অংশ ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে ভোটদানে উৎসাহিত করতে হবে এবং ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে সব ধরনের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নাটিকা বা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হবে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করতে হবে। আস্থা অর্জিত হলে সব রাজনৈতিক দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্র যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্রে ঘোষণা করতে হবে এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সই করা ফলাফল শিট প্রত্যেক প্রার্থীর প্রতিনিধির কাছে দিয়ে দিতে হবে। পরে উপজেলা সদরে মিডিয়াসহ সব প্রার্থী বা তার মনোনীত ব্যক্তির সামনে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে হবে যাতে ফলাফল নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে না পারে। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি থাকতে হবে যাতে কোনো সহিংসতা হতে না পারে এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারসহ সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর