শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সকালে বিচারককে সাজা, বিকালে স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালত অবমাননার দায়ে কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল রানাকে হাই কোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল বিকালে চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। হাই কোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সোহেল রানার করা আবেদনের শুনানি নিয়ে তিনি এ রায় দেন। আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন চেম্বার জজ আদালত। এর আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকা অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক সোহেল রানাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন হাই কোর্ট। বিচারপতি মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মাসুদ হাসান দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ রায় দেন। পরে হাই কোর্টের একই বেঞ্চ থেকে আপিল করার শর্তে জামিন পান বিচারক সোহেল রানা। রায় প্রদানের তিন ঘণ্টার মধ্যেই দুপুর সোয়া ২টায় জামিনের রায় দেওয়া হয়। তারপর ওই রায় নিয়ে আপিল বিভাগে যান বিচারক সোহেল রানা। গতকাল নির্ধারিত চেম্বার জজ আদালত না থাকলেও বিকাল সাড়ে ৫টার পর চেম্বার আদালত বিচারকের আবেদনের শুনানি নিয়ে তার কারাদন্ড ও জরিমানার রায় স্থগিতের আদেশ দেন। আদালতে সোহেল রানার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী পলাশ চন্দ্র রায় ও সেলিম আশরাফ চৌধুরী। শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সোহেল রানাকে হাই কোর্টের দেওয়া কারাদন্ড ও জরিমানার রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। সোহেল রানার আবেদনটি ২০ নভেম্বর আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেদিন কার্যতালিকার ২০ নম্বর ক্রমিকের পর বিষয়টি থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন চেম্বার আদালত। এর আগে জামিনের পর দুপুরে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে এক বছরের কম সাজা হলে আপিল দায়েরের শর্তে সংশ্লিষ্ট আদালত জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। তাই আপিল দায়ের করার শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করা হয়েছে। আদালত ৩০ দিনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। ফলে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, কুমিল্লার সাবেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা একটি মামলায় উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দাখিল করেছিলেন, তাতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। তাই গত ২৮ আগস্ট তার প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি হয়েছিলে। হাই কোর্ট সেই রুলের শুনানি নিয়ে গতকাল সাজার রায় দেন বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ। রায়ের পর হাই কোর্টে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী প্রণয় কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সোহেল রানা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিলেন। তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনায় সন্তুষ্ট না হয়ে হাই কোর্ট ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। জরিমানার টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর জমা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে তাকে সাত দিনের মধ্যে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জানা যায়, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামুন চৌধুরী ও রিয়া আক্তার দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির কার্যক্রমের বৈধতা নিয়ে মামুন-রিয়া দম্পতির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হাই কোর্ট রুল দেন। একই সঙ্গে মামলাটির কার্যক্রম চার মাসের জন্য স্থগিত করেন হাই কোর্ট। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। হাই কোর্টের এই স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও কুমিল্লার তৎকালীন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা গত ১০ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনকালে আদালতে মামুন উপস্থিত ছিলেন। রিয়া অনুপস্থিত থাকায় তাকে পলাতক ঘোষণা করেন আদালত। এ অবস্থায় মামুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে করতে বিচারক সোহেল রানাকে গত ১৪ আগস্ট হাই কোর্টে তলব করা হয়। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষার বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গত ২১ আগস্ট তাকে সশরীরে হাই কোর্টে হাজির হতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তিনি হাই কোর্টে হাজির হন। পরবর্তী সময়ে জবাব দাখিল করেন। তবে জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ২৮ আগস্ট সোহেল রানার প্রতি স্বতঃপ্রণোদিত আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাই কোর্ট। পাশাপাশি ৯ অক্টোবর তাকে হাই কোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে আদালত অবমাননার রুলের পর ৩১ আগস্ট সোহেল রানা মামলাটির অভিযোগ গঠনের আদেশ প্রত্যাহার করেন। একই সঙ্গে হাই কোর্টের ধার্য তারিখে সোহেল রানা সময়ের আরজি জানান। হাই কোর্ট ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ রাখেন। গতকাল আদালতে সোহেল রানা উপস্থিত ছিলেন।

আইনমন্ত্রীর সঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক : গতকাল বিচারক সোহেল রানা ইস্যুতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বিচারকরা এ রায়ের প্রতিবাদে কর্মসূচিতে যাওয়ার মনোভাব প্রকাশ করেন। আইনমন্ত্রী বিষয়টি আইনিভাবে সমাধানের আশ্বাস দিলে আপাতত কোনো কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

সর্বশেষ খবর