শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গ্রেফতার রায় আতঙ্কে বিএনপি

বিচারাধীন মামলা শেষ হচ্ছে পুরনো নাশকতা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করছে পুলিশ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

গ্রেফতার রায় আতঙ্কে বিএনপি

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আবারও মামলা ও রায় আতঙ্কে পড়েছে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। এ সম্পর্কে দলীয় সূত্র বলছে, পুরনো, অচল ও স্থগিত মামলা সচল করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নাশকতার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করছে পুলিশ। দলটির নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের পরিকল্পনার মধ্যে আছে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা ও আটকে রাখা, যাতে তারা কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। অর্থাৎ বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করাটাই সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করার ব্যাপারে সরকারের এই মহাপরিকল্পনা আগে থেকেই রয়েছে। একটা মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় আদালতের মাধ্যমে ফরমায়েশি রায় ও সাজা দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। পুরনো, স্থগিত ও অচল মামলাগুলো সচল করে দ্রুত রায় ও সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সম্প্রতি যে সাজা বহাল রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, সেটি সরকারের এই পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কিন্তু এতে কোনো লাভ হবে না এবার। কারণ জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। সার্বিকভাবে ব্যর্থ এই সরকারের পতন অনিবার্য।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মামলার জালে বন্দি হয়ে পড়েছে সমগ্র বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তৃণমূলের সক্রিয় এমন কোনো নেতা নেই, যার নামে একাধিক মামলা নেই। মামলা থেকে কেউ রেহাই পাননি। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো আন্দোলনের চূড়ান্ত ছক তৈরিতে ব্যস্ত, এমন সময়ে পুরনো মামলায় গ্রেফতার হচ্ছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ফলে সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা দলটিতে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, দলের সক্রিয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ‘টার্গেট’ করে করে পুরনো মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতাদের কারারুদ্ধ করতে চায় সরকার। বিচারকাজে হঠাৎ গতি পাওয়া তারই প্রতিফলন। এ জন্য তাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ভর করছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ৪৯ লাখ ৪১ হাজার ৭২২। আর অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মোট মামলার মধ্যে ২ হাজার ৮৩০টির বেশি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এর মধ্যে কয়েক শ গায়েবি মামলাও রয়েছে।

বিএনপির দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ওয়ান-ইলেভেনের সরকার থেকে শুরু করে ২০১৩-১৫ সালে করা মামলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। কিছু মামলা শেষ প্রান্তে। রাজনৈতিক এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, মধ্যম সারির ও তরুণ নেতারা আসামি। সূত্র জানায়, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির সিনিয়রদের মামলার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি হতে চলেছে। বিশেষ করে ২০১৩ এবং ১৪ সালের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য দিনে ১০ থেকে ১৫ জন সাক্ষী হাজির করে মামলাগুলো রায়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় গত ২ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলায় সম্প্রতি বিচারিক আদালতে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাই কোর্ট। পৃথক আরেকটি মামলায় দলটির আরেক নেতা আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার নির্বাচনি মাঠ খালি রাখতেই এলাকায় জনপ্রিয় নেতাদের সাজানো মামলার কারাদন্ড দিয়ে জেলে ঢোকাচ্ছে। এসব রায় সরকারের ফরমায়েশি।

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, হঠাৎ করে সরকার বিরোধী দলের ওপর মারমুখী হয়ে গেছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ ও উদার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। গত এক বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছি। বিপরীতে সরকার বিএনপিকে শুধু উসকানিই দিচ্ছে না, বরং নতুন করে মিথ্যা, আজগুবি, বানোয়াট, কাল্পনিক এবং গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপিকে দমন-পীড়নে নেমেছে।

সর্বশেষ খবর