শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
স্থল অভিযানের প্রস্তুতি ইসরায়েলের

২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে গাজা ছাড়ার হুমকি

প্রতিদিন ডেস্ক

ইসরায়েল সরকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা শহরের অধিবাসীদের শহর খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযানের লক্ষ্যে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে উত্তর গাজা সীমান্তে ভারী অস্ত্র ও হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে তেল আবিব। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গতকাল সকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতি প্রকাশ করে গাজা উপত্যকার উত্তর অংশে বসবাসকারী অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। আইডিএফ দাবি করেছে, তারা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গাজা শহরে ‘উল্লেখযোগ্য’ অভিযান পরিচালনা করতে চায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শহরে অভিযান শেষ হওয়ার পরই কেবল বেসামরিক ব্যক্তিরা আবার তাদের ঘরবাড়িতে ফিরতে পারবে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, ‘যুদ্ধের সময় ঘনিয়ে এসেছে।’ সংবাদ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এমন সময় এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে- যখন অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় জাতিসংঘের ১১ কর্মী এবং জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ৩০ শিক্ষার্থী নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ১৫৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং  ৬৬১২ জন আহত হন। নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৫০০ শিশু এবং ২৭৬ জন নারী রয়েছেন। ইসরায়েলের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘ বলেছে, ‘আইডিএফের ওই আদেশের অর্থ হলো, গাজা শহরসহ আশপাশের সব অধিবাসীকে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। ইসরায়েলি সেনাদের এ আদেশের মানবিক পরিণতি হবে বিধ্বংসী।’ অন্যদিকে গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, এটি তেল আবিবের একটি ‘ভুয়া প্রচারণা’। সংগঠনটি গাজাবাসীকে এই প্রচারণায় প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আরেক খবরে বলা হয়েছে, গাজার ওই অঞ্চল ছেড়ে না যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ফিলিস্তিনিরা। তাদের ভাষ্য, তারা মাতৃভূমি ছেড়ে কোথাও যাবেন না। ইসরায়েলের হুমকি প্রত্যাখ্যান করে গাজার বাসিন্দা ফিলিস্তিনি শিক্ষাবিদ এবং লেখক রেফাত আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি এবং তার পরিবার বাড়িতেই থাকবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে দুটি বিকল্প আছে- এই দখলদারিত্বকে পরাস্ত করা অথবা আমাদের বাড়িতে প্রাণ দেওয়া। আমরা গাজা ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।’

গাজায় রাতভর বিমান হামলা : বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে ১২টি টাওয়ারসহ ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকায় রাতভর ৭৫০টি ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অগণিত ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হচ্ছে এবং সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। এদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির প্রধান দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে সেগুলো অকেজো করে দিয়েছে। এসব হামলায় দামেস্ক ও আলেপ্পো বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে ফ্লাইটগুলো সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লাতাকিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ছয় দিনে ৬ হাজার বোমা :  ইসরায়েল ছয় দিনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ৬ হাজার বোমা ফেলেছে, যার মোট ওজন ৪ হাজার টন। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী আরও বলেছে, হামাসের ৩ হাজার ৬০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার।

জাহাজ ও গুপ্তচর বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ, ১০০ নাবিক এবং নজরদারি বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য। গতকাল ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে এ সহায়তা দেবে ঋষি সুনাক সরকার। দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, পসেইডন পি-৮ বিমান ও অন্যান্য বিমানের টহল ফ্লাইট গতকাল শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিট ঘোষণা করেছে, ইরান বা রাশিয়ার মতো দেশগুলো থেকে লেবাননের হিজবুল্লাহ যাতে অস্ত্র সহায়তা না পায়, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- সেখানকার আঞ্চলিক ও উত্তেজনা নিরসন নিশ্চিত করা। হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার নিরীহ নিহত মানুষের কাছে মানবিক ত্রাণ সহয়তা পৌঁছে দেওয়া। উল্লেখ্য, ব্রিটেন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ একই কথা বলে ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ইরান ও সৌদি আরব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের অবরোধ এবং অনবরত বিমান হামলায় গাজার হাসপাতাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। গতকাল মানবিক সহায়তার আহ্বান জানিয়ে সংস্থটি বলেছে, নিবিড় পরিচর্যা, এক্সরে ও ডায়ালাইসিস সেবার জন্য গাজার হাসপাতালগুলোতে দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীদের আসা-যাওয়া এবং অসুস্থ ও আহতদের সরানোর জন্য একটি মানবিক করিডর খোলা দরকার। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সরবরাহ, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিতে পারছে না ত্রাণ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এগুলোর ঘাটতি মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর