শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফিকে হচ্ছে সেমির স্বপ্ন

চিদাম্বরম স্টেডিয়াম অপরিচিত নাম নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। ৩৮ হাজার আসনের স্টেডিয়ামে এবারই প্রথম খেলছে, এমন নয়। এর আগেও খেলেছে টাইগার ক্রিকেটাররা। ২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালে তিন জাতির কোকাকোলা টুর্নামেন্টে কেনিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিল। বাংলাদেশ তখন আইসিসির সহযোগী দেশ। কেনিয়াও সহযোগী দেশ। ম্যাচটি যখন হয়েছিল, তখন স্টেডিয়ামের নাম ছিল চিপুক স্টেডিয়াম। সেবার ২৮ রানে ম্যাচ হেরেছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, খালেদ মাহমুদরা।

এই দুই ক্রিকেটার এবার দলের সঙ্গে বিশ্বকাপে এসেছেন। টেকনিক্যাল উপদেষ্টা শ্রীধরন শ্রীরামের সঙ্গে দুজনেই চিদাম্বরমের উইকেট নিয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন ক্রিকেটারদের। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা বিন্দুমাত্র কাজে দেয়নি। বরং ফেবারিট নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে সাকিব বাহিনী। ৩ ম্যাচে দুই হারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে বাকি ৬ ম্যাচের চারটি জিতলে সূক্ষ্ম সম্ভাবনা থেকে যাবে। অন্যদিকে টানা তিন জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে ২০১৫ ও ২০১৯ সালের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড।

ইনজুরির জন্য ছয় মাস মাঠের বাইরে ছিলেন কেন উইলিয়ামসন। ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে বিশ্বকাপে খেলতে আসেন। প্রথম দুই ম্যাচ তিনি খেলেননি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে। গতকাল প্রথম খেলেন। খেলতে নেমে ৭৮ রানের নান্দনিক একটি ইনিংস খেলেন। অবশ্য রিটায়ার্ড হার্ট হয়েও মাঠ ছাড়েন। শরিফুলকে ছক্কা মেরে ম্যাচের সমাপ্তি টানেন ড্যারেন মিচেল। ৬৭ বলে ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটিতে প্রথম রান ছিল ছক্কা। হাফ সেঞ্চুরি করেন ছক্কা মেরে। উইনিং শটটিও নেন ছক্কায়। তার ইনিংসে ছক্কা ছিল ৪টি এবং চার ৬টি। অসাধারণ ব্যাটিং। উইলিয়ামসন ১০৭ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন ৮ চার ও ১ ছক্কায়। উইলিয়ামসন ও মিচেলের জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড জয় পায় ৭.১ ওভার হাতে রেখে। দুজন ছাড়াও ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন ডেভন কনওয়ে। ম্যাচসেরা হয়েছেন ফাস্ট বোলার লুকি ফার্গুসন, ৪৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে।  

আবারও ব্যর্থ ওপেনিং জুটি। আবারও ব্যর্থ ওপরের সারির ব্যাটিং অর্ডার। গত ১৩ ম্যাচের মধ্যে ১১ বার পঞ্চাশের নিচে জুটি গড়েছেন টাইগারদের ওপেনিং জুটি। এশিয়া কাপে দুবার মাত্র পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছিলেন ওপেনাররা। ১৩ ম্যাচে ৬টি ওপেনিং জুটি খেলিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সাফল্য নেই। গতকাল টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। শূন্য রানের জুটি। অথচ আগের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে ৭৬ রান করেছিলেন লিটন। আগের দুই ম্যাচের মতো পুনরায় ব্যর্থ আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। ১৭ বলে ৪ চারে ১৬ রান করেন। আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেও ইনিংসকে বড় করতে পারেননি মেহেদী মিরাজ। ব্যক্তিগত ৩০ রানে ফেরেন সাজঘরে আফগানিস্তান ম্যাচের নায়ক মিরাজ। ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হয়েছেন কনওয়ের দারুণ ক্যাচে। বোলার ছিলেন গ্লেন ফিলিপস। ১২.১ ওভারে ৫৬ রানে ওপরের সারির চার ব্যাটারকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন দুই সিনিয়র সাকিব ও মুশফিক। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ২০০৭ সাল থেকে টানা ৫টি বিশ্বকাপ খেলছেন। দুজনে বিপর্যয়ে দলের হাল ধরেন। ১৭.৪ ওভারে ৯৬ রান যোগ করেন স্কোর বোর্ডে। অথচ দুজনেরই সুযোগ ছিল জুটিকে বড় করার। সুযোগ ছিল ব্যক্তিগত স্কোরগুলোকেও বড় করার। কিন্তু অহেতুক স্ট্রোক খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন দুজনে। প্রচ- গরমে ক্লান্ত হয়ে মাঠেই চিকিৎসা নেন সাকিব। এক পর্যায়ে হেলমেট খুলে ব্যাটিং করেন। আউট হওয়ার আগের ৬ বলে ২টি ছক্কা ও একটি ৪ মারেন টাইগার অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ৪০ রানে আউট হওয়ার ঠিক আগের বলে ফার্গুসনকে ছক্কা মারেন। পরের বলটি খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি হন। মিস করেন ২৪৩ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৬ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি। এ ছাড়া ৩৭ ম্যাচ ধরে সেঞ্চুরিহীন টাইগার অধিনায়ক। ছন্দে থাকা মুশফিক দারুণ খেলছিলেন। হঠাৎ করে হেনরির স্লোয়ারে প্রি ডিটারমাইন্ড শট খেলে বোল্ড হন তিনি। তার আগে অবশ্য ৬৬ রানের একটি প্রত্যয়ী ব্যাটিং করেন। ৭৫ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি চার ও ২ ছক্কায়। তৌহিদ হৃদয় ১৩ রান করেন। নিজেকে প্রমাণ করেন ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৮ নম্বরে ব্যাট করে একাই দলকে টেনে নিয়ে যান। আফগানিস্তান ম্যাচে সুযোগ পেলেও ইংল্যান্ডের ম্যাচে খেলেননি মাহমুদুল্লাহ। গতকাল সুযোগ পেয়ে ৪৯ বলে অপরাজিত ৪১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তাতে ছিল ২টি করে চার ও ছক্কা। তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের দারুণ ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪৫ রান করে। তিন সিনিয়র মিলে রান করেছেন ১৪৭।

সর্বশেষ খবর