রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
রাজধানীতে জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যেভাবেই হোক নির্বাচন হবেই

♦ উন্নয়ন চাইলে নৌকা, ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত ♦ আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতাটা কে? ♦ অনশনের নামে নাটক করছে বিএনপি ♦ রিজার্ভের টাকা জনগণের সেবায় খরচ করেছি ♦ কেমন ছেলে সে অসুস্থ মাকে দেখতে আসে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেভাবেই হোক নির্বাচন হবেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর কাওলায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেভাবেই হোক নির্বাচন এদেশে হবেই। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। আমার একটাই কথা, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই। তিনি বলেন, নৌকা দেশের স্বাধীনতা দিয়েছে। নৌকা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণেই পানির কষ্ট নেই। মানুষ সুখে আছে। উন্নয়ন চাইলে নৌকা, আর ধ্বংস চাইলে বিএনপি-জামায়াত।

গতকাল বিকালে রাজধানীর কাওলা সিভিল এভিয়েশন মাঠে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গত শনিবার এ সমাবেশটি হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারিখ পরিবর্তন করে গতকাল এ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টা থেকেই সিভিল এভিয়েশন মাঠে মিছিলের ঢল নামে। বিকাল সোয়া ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগে পুরো মাঠ উপচে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্যে হয়। লাল রঙের টি-শার্ট পরে নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জনসভা লালে লাল হয়ে যায়। রং-বেরঙের টুপি-গেঞ্জি পরে, ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড হাতে নিয়ে মানুষের স্রোতে জনসভাটি রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে তারা (বিএনপি) সবকিছু ধ্বংস করে দেবে। দেশের জনগণ কী ধ্বংস চায়, যুদ্ধাপরাধীদের কথা শুনতে চায়? চায় না। তাই যেভাবেই হোক নির্বাচন এদেশে হবে। দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে, জনগণ ভোট দিলে আছি, নইলে নাই। তিনি বলেন, দেশের জনগণই আমার একমাত্র শক্তি, জনগণের ওপরই আমার সবচেয়ে বড় আস্থা। তিনি বলেন, আপনারা কি বিএনপির কথায় নাচতে চান? এ সময় সবাই না না বলে জবাব দেন। এ সময় নৌকায় ভোট দেবেন কি না- উপস্থিত মানুষের ওয়াদা চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। জনসভায় আসা লোকজন ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নিজে দিলে হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোট দিতে হবে।  শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ভোটে আসবে কি আসবে না, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। তারা যে নির্বাচন করবে, নেতাটা কে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া? খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান? তারা জানে নির্বাচনে এলে জিততে পারবে না। নির্বাচন হলে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে, তাই বিএনপি নির্বাচনকে নষ্ট করতে চায়, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। দেশকে এগিয়ে নিতে একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে, এটা আমরা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণ করাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। বিদেশে ধরনা দিয়ে কোনো লাভ নেই। জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। আর দেশের জনগণই আমার একমাত্র শক্তি, জনগণের ওপরই আমার সবচেয়ে বড় আস্থা। বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। তাদের জন্য কাজ করার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। তাই আরেকবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশসেবার সুযোগ দিন, আমরা আরও উন্নয়ন দেব, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব।  

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপির অনশন কর্মসূচির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে দেখি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা অনশন করে। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাস্তা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। তারা এ নাটকই করে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) নাকি আমাদের উৎখাত করে দেবে। সময় দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করবে?

বিএনপির দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অর্থ পাচারের কারণে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। সে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরকারবারি, অর্থ পাচারকারী। বিএনপি নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (তারেক রহমান) মা-তো অসুস্থ। আপনারা অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না? এটা কেমন ছেলে, সেটা আমার প্রশ্ন। মা-তো অসুস্থ মরে মরে। তিনি নাকি যখন তখন মরে যাবেন। এটা ঠিক বয়সও হয়েছে, অসুস্থ তো বটেই। তবুও মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলব, মাকে দেখতে আসুক। বিএনপি ভোট কারচুপি করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সংগ্রাম করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতান্ত্রিক ধারা থাকলে একটা দেশের উন্নতি হয়, আর গণতান্ত্রিক ধারা যারা বিশ্বাস করে, তারা ক্ষমতায় থাকলে দেশের যে উন্নয়ন হয়, সেটা আজ প্রমাণিত।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটা প্রকল্প ভবিষ্যতে নেব। পুরো ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, যানজট দূর করার জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যেই মেট্রোরেল করেছি। পাশাপাশি পাতাল রেলের কাজও আমরা শুরু করেছি। বিদ্যুৎ নিরাপত্তার জন্য আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। ঢাকার যেখানে রেললাইন আছে, সেখানে ওভারপাস করে দেওয়া হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

২০০১ সালে দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, দেশের স্বার্থ কখনো বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাস তো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিমরা একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে। খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিল’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিলেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। এখন তিনি (খালেদা জিয়া) না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধীদলীয় নেত্রী। কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’ তিনি বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা তা করেছি। যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বক্তৃতা দিয়েছে, তার পরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। নেতা-কর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। এত কিছুর পরও আমি তাকে (খালেদা জিয়া) বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দলটির প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রাম জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রতিটি সংগ্রামে আপনারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আন্দোলন চালিয়েছেন। আমরাই আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি নির্বাচনি ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। রিজার্ভ গেল কোথায়? অনেকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সেবায় রিজার্ভের টাকা খরচ করেছি। ভ্যাকসিন কিনেছি। খাদ্য মন্দায় খাদ্য কিনেছি, এখনো কিনছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনায় ধনী দেশ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন দিয়েছে, আমরা দিয়েছি বিনামূল্যে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে যখন যেটা প্রয়োজন হয়েছে, করেছি। তিনি বলেন, বিএনপির আমলে দেশ ছিল পিছিয়ে। আওয়ামী লীগের আমলে এগিয়ে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের আদর্শ ও চেতনায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সেটা ধারণ করে এবং জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। আপনাদের এলাকাকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আজকে দেশের মানুষ ভূমি ও গৃহ পাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। বস্তিবাসীকেও ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট দিচ্ছি। তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি গ্রামে গেলাম, সেখানে দেখি সবার হাতে মোবাইল ফোন। সবাই ছবি তুলছে। অথচ বিএনপির আমলে কম্পিউটার ছিল না। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ এ আরাফাত এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তরের হাবিব হাসান এমপি, নাজিম উদ্দিন, মতিউর রহমান মতি, খসরু চৌধুরী, এস এম তোফাজ্জল হোসেন, রফিকুল ইসলাম বেপারী, মিজানুর রহমান চান, বরিউল ইসলাম রবি, কাজী সালাউদ্দিন পিন্টু, ফয়েজ আহমেদ, মহিলা লীগের উত্তরের সাধারণ সম্পাদক হাসিনা বারী, কৃষক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের মো. মাকসুদুল ইসলাম, উত্তর ছাত্রলীগের শামীম আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকা উপহার দেন স্থানীয় এমপি হাবিব হাসান।

সর্বশেষ খবর