রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নির্বিচারে বোমা, নেই পালানোর স্থান

ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু, হামাসেরও পাল্টা হামলা

প্রতিদিন ডেস্ক

নির্বিচারে বোমা, নেই পালানোর স্থান

টানা এক সপ্তাহ ধরে বিমান হামলার পর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের দুটি শরণার্থী শিবিরে এ অভিযান চালানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লোকজনকে ‘গাজা ছাড়া’র নির্দেশ জারি করার পর এ অভিযান শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা জানিয়েছে, তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলি অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা চালিয়ে চার ইসরায়েলি সেনাকে আহত করেছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, এপি।

খবরে বলা হয়েছে, গতকাল জেরুজালেমের পাশে কালান্দিয়া শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর আগে এদিনই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন ও জেরিকোতে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের খবর পাওয়া যায়। এসব অভিযানে দুজন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এরই মধ্যে উত্তর গাজা ছেড়ে হাজার দশেক মানুষ পালিয়েছেন। খবরে বলা হয়, গাজা থেকে পালানোর সময়   বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, এতে অন্তত ৭০ জনের প্রাণ গেছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গতকাল পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ২ হাজার ২১৫ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৭১৪ জন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ৩০০ জন নিহত ও ৩ হাজার ৩৬০ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার  ফিলিস্তিনি। গাজা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বিবরণ অনুযায়ী, গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে গেছে পুরো ভবন। ধ্বংসস্তূপের নিচে হতাহত কেউ আছে কি না, খুঁজে দেখছেন ফিলিস্তিনিরা। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা শুরুর পর ১৯টি চিকিৎসা কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গণমাধ্যমের ৪৯টি কার্যালয় ধ্বংস হয়েছে। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানায়, বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া ফিলিস্তিন টাওয়ারে ছিল স্থানীয় পত্রিকা আল-আইয়াম-এর কার্যালয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমান হামলা চালিয়ে গাজায় ১১টি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরও সাতটি মসজিদ ও গির্জা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া গির্জাগুলো প্রাচীন। এ ছাড়া ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় ১ হাজার ৩০০ ভবন ধ্বংস হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৭৫০টি ঘরবাড়ি। একজন প্রতক্ষ্যদর্শী গণমাধ্যমকর্মী জানান, অবরুদ্ধ উপত্যকাটির কোথাও নিরাপদ নয়। বোমার আঘাতে কখনো ভেঙে পড়ছে বাড়ি, কখনো মসজিদ-স্কুল। যে যার মতো দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছুটছে। আরেক খবরে ফারস নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা আবারও গাজা উপত্যকার আশপাশের ইহুদিবাদী এলাকায় প্রবেশ করেছে। ইহুদি সেনাবাহিনীর কঠোর প্রহরা সত্ত্বেও প্রতিরোধ যোদ্ধারা ওইসব নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশে করতে সক্ষম হয়েছে। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদ্দিন আল-কাসসাম জানায়, গতকাল দুপুরে তারা ইহুদিবাদী বসতিতে পুনরায় প্রবেশ করেছে। সকালেও প্রতিরোধ বাহিনী গাজার নিকটবর্তী ইহুদিবাদী শত্রুদের অবস্থানে মর্টার হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় অন্তত চার ইহুদিবাদী সেনা আহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ফোনালাপ : ইসরায়েল ও গাজার মধ্যকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও  চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই-এর মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে। এই সংঘর্ষ যাতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে চীনের সহায়তা চেয়েছেন ব্লিঙ্কেন। জবাবে ওয়াং ওয়াশিংটনকে এ ক্ষেত্রে ‘গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা’ পালন করার আহ্বান জানান।

ওয়াং বলেন, ‘পুরো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন সংকট মোকাবিলা করার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারা দেশগুলোকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা এবং ন্যায্যতা মেনে চলতে হবে, শান্তি ও সংযম বজায় রাখতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব বেইজিং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে ‘শান্তি আলোচনা’ আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর