সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি

১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ থেকে আলটিমেটাম

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি

সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ‘আলটিমেটাম’ দেবে বিএনপি। আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ থেকে সরকারকে কয়েক দিনের সময় বেঁধে দিয়ে এই আলটিমেটাম দিতে পারে দলটি। দাবি না মানলে দুর্গাপূজার পর থেকেই শুরু হবে বিএনপির শেষ ধাপের আন্দোলন কর্মসূচি। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই চূড়ান্ত এই কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকা ভিত্তিক কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা ঘেরাওসহ হরতাল, অবরোধ, এমনকি অসহযোগ-এর মতো কর্মসূচির কথাও বিএনপির পরিকল্পনায় রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোডমার্চ ও সমাবেশ হয়েছে। সারা দেশের পাশাপাশি এখন থেকে সব কর্মসূচি হবে রাজধানী ঢাকা ভিত্তিক। এ সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। আশা করি আসন্ন দুর্গাপূজার মধ্যেই সরকার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যথায় জনগণ এই সরকারের পতন ঘটাতে প্রস্তুত। এর মধ্যে সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জনগণই সেই ক্ষমতা দখল করবে।

জানা গেছে, চূড়ান্ত আন্দোলনের দ্বারপ্রান্তে থাকা বিএনপি এবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক সংকটের ফয়সালা চায়। সরকার বিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্ব শুরু করতে চায়। ‘আলটিমেটাম’ ঘোষণার পর ‘অলআউট’ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সেই লক্ষ্যে ঢাকায় মহাসমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূডঢ় আলোচনায় রয়েছে। কিংবা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থানসহ ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির পক্ষেও মতামত দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকাকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত কর্মসূচির জন্য ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপিসহ আশপাশের জেলাগুলোর সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী- কেন্দ্র থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও রয়েছে। সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার আগে চলতি মাসে পর্যায়ক্রমে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষ এখন একটা কথাই শুনতে চায়- এই সরকার কবে বিদায় নেবে? আর কোনো ছাড় নয়। একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সেই প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলনের বিজয় সূচিত হবে ইনশা আল্লাহ। তাছাড়া সরকারের পতনের জন্য যা যা করা দরকার, যে সব কর্মসূচি দেওয়া প্রয়োজন- তার সবকিছুই করা হবে। এক দফা দাবিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচি ৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে সমাবেশ ও রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে রাজধানী ও আশপাশের জেলায় বিএনপির আটটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোডমার্চ হয়েছে পাঁচটি। এ ছাড়া ঢাকায় মহিলা সমাবেশ, শ্রমিক, পেশাজীবী ও ছাত্র কনভেনশনসহ কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপি নীতিনির্ধারকরা এসব কর্মসূচির মূল্যায়নও করেছেন।

এদিকে স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসাকে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহার করে সরকার বিএনপিকে কাবু করতে চায়। তবে চেয়ারপারসন নিজেই কোনো ধরনের ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার হতে চান না বলে তাঁর পরিবার ও দলের সিনিয়র নেতাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর