বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আবদারের ভিড় জনপ্রশাসনে

♦ পদোন্নতি-বদলি বদলি ঠেকানোসহ নানা তদবির ♦ দীর্ঘ অপেক্ষা করে সাক্ষাৎ সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে

ওয়াজেদ হীরা

আবদারের ভিড় জনপ্রশাসনে

জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। তফসিল হলে প্রমোশন, পদায়ন, বদলি সবই থমকে যায়। আর সে কারণে তফসিলের আগে পদোন্নতি, পছন্দের জায়গায় বদলি বা বদলি ঠেকানোর মতো নানা আবদারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভিড় করছেন ক্যাডার, ননক্যাডার কর্মকর্তারা। অনেককেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অপেক্ষমাণ রুমে, বারান্দায় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। কেউ হতাশ হচ্ছেন কেউবা আশায় বুক বেঁধে চলে যাচ্ছেন।

গত কয়েকদিন সচিবালয়ের ১ নম্বর ভবনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনেক কর্মকর্তার আনাগোনা দেখা গেছে। বেশির ভাগই এসেছেন পদোন্নতি বিষয়ে কথা বলতে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও যাতায়াত বেড়েছে। গতকালও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আনাগোনা ছিল মন্ত্রণালয়ে।

মন্ত্রণালয়ে তদবিরের চাপ বা বেশি মানুষের আনাগোনা বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আনাগোনা বেড়েছে বলতে মানুষ নিয়েই তো কাজ। তদবিরের জন্য আসে অনেকেই। বাবা, মা বা সন্তান অসুস্থ এসব কারণে। তবে অযৌক্তিক তদবিরের স্থান নেই। জনপ্রতিনিধি হয়েছি বলেই আসে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের তদবিরও থাকে। যারা তদবির করে তাদের অস্থিরতাও বেশি থাকে কারণ মনে করেন এ সময় না পেলে যদি পরে আর না পাওয়া যায়। আসলে মানবিক তদবির নিয়ে আসে অনেকে।’ চাপ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রুটিনমাফিক কাজ করছি। কোনো চাপ নেই। এ সময়টায় বড় ধরনের কোনো প্রয়োজন ছাড়া বদলি করা হচ্ছে না। জনপ্রশাসন এখন টোটালি সুশৃঙ্খল।’ নানা প্রশিক্ষণের কারণে কর্মকর্তারা এখন আগের চেয়ে অনেক দক্ষ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে প্রশাসন ক্যাডারের ২৯ ব্যাচকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দিতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডে (এসএসবি) বৈঠক চলছে। ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করে প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আর দুটি বৈঠক হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে যে কোনো উপসচিবের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। অনেকেই এসএসবির সদস্যদের (সচিব) সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে, বিভিন্ন অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রতিদিন অসংখ্য কর্মকর্তা আসেন, অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাও আসছেন তদবির নিয়ে। নিজ জেলায় কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকলে তার কাছেও ছুটছেন অনেকে। নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের সচিব মো. আবদুস সবুর মন্ডল জানিয়েছেন, উপসচিবদের পদোন্নতির বিষয়ে কাজ চলছে।

কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তাও ঘুরছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বারান্দায়। তাদের গ্রেড-২ পদ ফাঁকা আছে। মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ফাইল কোন পর্যায়ে আছে তা জানার জন্যই তাদের চেষ্টা।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, অন্য ক্যাডারদের পদোন্নতির মিটিং হয়েছে শুধু প্রজ্ঞাপন জারি বাকি। জনপ্রশাসনের যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের আনাগোনা একটু বেড়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তারা আসছেন, অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা আসছেন নানা বিষয় জানতে।

রাজশাহী বিভাগের এক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে বলেন, ‘একটা কাজে এসেছিলাম। আমার জেলার এক সচিব স্যারের সঙ্গে আমার বদলির বিষয়ে কথা বললাম। নির্বাচনের আগে যেনতেন স্থানে যেতে চাই না।’

কয়েকদিন আগে বদলি হওয়া এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেকেই এখন ঢাকা বা আশপাশে থাকতে চাইছেন। আমিও চেষ্টা করছি।’

মাঝে কয়েকদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। পুলিশে অতিরিক্ত পদ (সুপারনিউমারারি) চেয়ে স্বরাষ্ট্র থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি আসার পর থেকেই উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আনাগোনা ছিল দেখার মতো। যেন চাহিদা থেকে জনপ্রশাসন কাটছাঁট না করে সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। পদোন্নতি নিয়ে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছিলেন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও। এ ছাড়া গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, রেলওয়ে প্রকৌশলের একাধিক কর্মকর্তাকে দেখা যায় বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষে। এক প্রকৌশলী বলেন, ‘পদোন্নতির বিষয়ে কোনো খবর আছে কি না ব্যাচম্যাটদের কাছে একটু জানার চেষ্টা করছি।’

এদিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, ট্যাক্স, রেলওয়ে, আনসার, কাস্টমস, প্রকৌশল, কৃষিবিদসহ প্রায় ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাকে উপসচিবের তদূর্ধ্ব যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিবে পদোন্নতির সময় কোটার ফাঁদে ফেলে বঞ্চিত করা হয় বলে ওইসব ক্যাডারের মধ্যে নানা ধরনের ক্ষোভ রয়েছে। পদোন্নতির জন্য বা বদলি ঠেকাতে অনেকেই মন্ত্রী-সচিবদের ফোন বা আধাসরকারি পত্র দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর