বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইসরায়েলের বোমা গাজার হাসপাতালে

নারী শিশুসহ নিহত আট শতাধিক হামলা অন্যরা চালিয়েছে : বাইডেন

প্রতিদিন ডেস্ক

ইসরায়েলের বোমা গাজার হাসপাতালে

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-আহলি আরব হাসপাতালে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান থেকে বেপরোয়া বোমাবর্ষণে নারী-শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। এ হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী যখন নিন্দার ঝড় উঠেছে তখন ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির রাজধানী তেলআবিব পৌঁছেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর দাবি করেছেন, ‘আল-আহলি আল আরবি হাসপাতালে ইসরায়েল নয়, অন্য দল হামলা চালিয়েছে।’ বাইডেনের সফরের বিরুদ্ধে গতকাল   পশ্চিমতীরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। পাশাপাশি এদিন আবারও ইসরায়েলি বিমান থেকে গাজার পশ্চিমে একটি আবাসিক ভবনে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ লেবাননে হোয়াইট ফসফরাস বোমা ফেলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, পার্স টুডে।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর হামলার সমর্থন জানাতে ইসরায়েল সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে ইসরায়েলে অবতরণ করেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন। শেষে ব্রিফিংয়ে বাইডেন বলেন, ‘গাজার আল-আহলি আল-আরবি হাসপাতালে ইসরায়েল নয়, অন্য দল হামলা চালিয়েছে।’ এ সময় তিনি নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা নন, মনে হচ্ছে অন্য কোনো দল গাজার হাসপাতালে মারাত্মক বোমা হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি হলো  যে, গাজার হাসপাতালে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমি গভীরভাবে দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি। আমি যা দেখেছি তার ওপর ভিত্তি করে মনে হচ্ছে এ কাজ অন্য কোনো দল করেছে, আপনারা নন।’ তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় মার্কিন নাগরিক নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের মানুষ এবং বিশ্বের মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানাতে আজ আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসে বিষয়টি পরিষ্কার করতে চেয়েছিলাম। এ সময় নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘যুদ্ধের সময় একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই প্রথম ইসরায়েল সফর। আপনার মতো একজন সত্যিকারের বন্ধু থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সেই বন্ধু এখন ইসরায়েলেই দাঁড়িয়ে আছেন।’ 

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি গতকাল এ কথা জানান। তিনি তার এক্স অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে বলেন, গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সব পক্ষের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। জীবনরক্ষাকারী সামগ্রীর সরবরাহ শুরুর জন্য আমাদের অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় প্রবেশাধিকার দরকার।’

ফিলিস্তিনের আল-ইয়াওমের খবরে গতকাল বলা হয়, এদিন গাজার পশ্চিমে ইসরায়েলি সেনারা একটি আবাসিক ভবনে ভয়াবহ হামলা চালায় এবং এতে কমপক্ষে ৩০ জন হতাহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ গাজার ‘বনি সুহেইলা’তে অপর এক হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ১২ ফিলিস্তিনিকে শহীদ করেছে। আরেক খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে হোয়াইট ফসফরাস বোমা হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি তারা কামান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ করেছে। লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, ১৯৮০ সালের  জেনেভা কনভেনশন অনুসারে, শত্রুর অবস্থান লক্ষ্য করে সরাসরি হোয়াইট ফসফরাস বোমা দিয়ে হামলা চালানো নিষিদ্ধ। এ বোমা মানুষ ও পরিবেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না বলে আইন করা হয়। কিন্তু ইসরায়েল এ আইনের পরোয়া করেনি। সূত্র জানায়, এ কনভেনশন লঙ্ঘন যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ইসরায়েল এ কনভেনশন সবসময় লঙ্ঘন করে আসছে। এর আগেও সেনারা গাজা ও লেবাননের ওপর হোয়াইট ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছিল।

আরেক খবর অনুযায়ী, প্রতিরোধ যোদ্ধারা লেবানন থেকে একটি ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে মেতুলা শহরে তিন ইসরায়েলি আহত হয়েছে। খবরে বলা হয়, কয়েক দিন ধরে লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহ এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনাদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, লেবানন সীমান্তে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরের বিরুদ্ধে গতকাল পশ্চিমতীরে ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যে হাসপাতালে বোমা হামলা চালানো হয়েছে, সেখানে গতকাল পর্যন্ত নারী-শিশুসহ মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। বোমা হামলা থেকে বাঁচতে এ হাসপাতালেই বহু সাধারণ মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদেরই হত্যা করেছে ইসরায়েল। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পক্ষে আমেরিকা, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো পশ্চিমা দেশগুলো সর্বশক্তি দিয়ে ইসরায়েলকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে।

সৌদি সফরে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী : ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তেল নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। এ ছাড়া যেসব মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে সেসব দেশ থেকে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার করার দাবি জানিয়েছে তেহরান। গতকাল সৌদি আরবের বন্দরনগরী জেদ্দায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসির বিশেষ জরুরি বৈঠকে দেওয়া বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান। তিনি এদিন ওআইসির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য জেদ্দায় পৌঁছান। বৈঠকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বর্বর গণহত্যা ও সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, গাজার একটি হাসপাতালে ইহুদিবাদী ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। তিনি আশা করেন, বিশ্ব সম্প্রদায় এবার অন্তত গাজার শিশু হত্যাকারী ইহুদিবাদী সরকারের গণহত্যা বন্ধে উদ্যোগ নেবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর