শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর ১৫০ সেতু উদ্বোধন

ফিলিস্তিনে বারবার আঘাত মেনে নেওয়া যায় না

প্রতিদিন ডেস্ক

ফিলিস্তিনে বারবার আঘাত মেনে নেওয়া যায় না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের জঘন্য হামলার বিরুদ্ধে নীরব থাকায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের ওপর বারবার হামলা আর সহ্য করা যায় না।

গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে দেশের আট বিভাগের ৩৯ জেলায় একযোগে নবনির্মিত দেড় শ সেতু ও ১৪টি ওভারপাস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। বাসস

ওআইসিভুক্ত দেশের রাষ্ট্রদূত এবং চার্জ দি অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে গতকালও বৈঠক করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সকলে এক হয়ে ফিলিস্তিনের অধিকার  প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের পাশে আছি। এভাবে তাদের ওপর বারবার আঘাত হানা কখনো মেনে নেওয়া যায় না, আমরা মানতে পারি না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দেখি অনেকেই (বিএনপি) চুপ থাকেন। কারণ যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা যদি আবার নাখোশ হয়। তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে দ্রুত এ যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আর ফিলিস্তিনবাসী তাদের ভূমি যেন ফেরত পায়। যে জায়গাগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলো তাদের ফেরত দিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বোমা মেরে মানুষ-শিশু হত্যা করা হলো, রক্তাক্ত শিশুদের সেই চেহারা সহ্য করা যায় না। সেজন্য আগামী শুক্রবার আমি সকলকে অনুরোধ করব জুমার পর দেশের প্রতিটি মসজিদে এবং অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেন দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। কেননা শুধু মুসলিম নয়, হতাহতদের মধ্যে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছে। আর শনিবার আমরা শোকদিবস ঘোষণা করেছি, সেদিন আমাদের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের যেসব নারী, শিশুসহ জনগণ এখন কষ্ট পাচ্ছে তাদের জন্য আমরা ওষুধসহ শুকনো খাবার এবং শিশু ও নারীদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য পাঠাব। কারণ আমাদের যেটুকুই সম্পদ তা নিয়ে আমরা সব সময় দুর্গত মানুষের পাশে আছি। যতটুকু পারি সাহায্য আমরা করব। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তাঁর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন বলেও জানান তিনি।

যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করে সে অর্থ বিশ্বের শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধ বন্ধ করে যে টাকা অস্ত্র বানানোর এবং ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যয় হয় তা যদি বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করা হয় তাহলে সব শিশুই উন্নত জীবন পেতে পারে, সেটাই আমাদের দাবি, আমি সব সময় এ কথা বলে আসছি।

গতকাল দেড় শ সেতু এবং এর আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর সারা দেশে ১০০ সেতু ও ১০০ সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে অনেক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করেছি। সেগুলো মানুষের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা দেবে। তিনি সড়ক ভবন চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি সুদৃশ্য ম্যুরাল ‘তৃতীয় নেত্র’ উদ্বোধন করেন।

তিনি একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে ডিটিসিএ ভবন, বিআরটিএ’র স্বয়ংক্রিয় মোটরযান ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র এবং বিআরটিসির বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধনসহ ময়মনসিংহ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর কেওয়াটখালী সেতু ও রহমতপুর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৬২ জন বা তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ দশমিক ৮ কোটি টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ কর্মসূচি চালু করেন এ অনুষ্ঠান থেকে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু খাতের উন্নয়নসংবলিত ‘উন্নয়ন দর্পণ’ নামে একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন তিনি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রওশন আরা মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের (আরএইচডি) সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী এবং এর প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসানও বক্তব্য দেন। ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ এবং ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ এ কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। তাদের সঙ্গে পরে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। মানুষ খুন করা দল। তারা প্রতিদিন আমাদের পদত্যাগ চায়। সে দাবিতে প্রতিদিন আন্দোলন করছে, করুক। আমার আছে জনগণ। আমার তো আর কেউ নেই। বাবা-মা, ভাইবোন সবই তো হারিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলে। অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন, নানান কথা বলে। সেটা নিয়ে আমি এখন সমালোচনা করতে চাই না। কারণ অনেক ভালো কাজ করেছি। তাই ভালো কথাগুলো বলে যেতে চাই। কিন্তু এদের কথা ও কাজ সবই ধ্বংসাত্মক। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে আমি সতর্ক করতে চাই। আজকের উন্নয়নগুলো ধ্বংস করুক সেটা আমরা চাই না। বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা নেই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচন এবং পরের উপনির্বাচন মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াত ২০-দলীয় ঐক্যজোট ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি পেয়েছিল। এই হলো তাদের শক্তি, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল, তা এখনকার তরুণরা জানে না। তাদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। ঘরে ঘরে সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ সুপেয় পানির নিশ্চয়তা পেয়েছে, যেজন্য একসময় হাহাকার ছিল। তিনি বলেন, যারা আমাদের বাস, ট্রাক বা গাড়ি চালায় রাস্তায় তাদের যে একটা অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা, ওভারটেক করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। এজন্য চালকদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার পরপর বাস ও ট্রাকের চালক ও যাত্রীরা যাতে একটু বিশ্রাম নিতে পারে, সেজন্য বিশ্রামাগার করে দিতে বলেছি। ইতোমধ্যে কয়েকটা জায়গায় নির্মাণ হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আমরা আরও করে দেব। কেননা গাড়ি চালাতে যেমন পেট্রোল লাগে, যাকে দিয়ে চালাবেন তারও তো পেট্রোল দরকার। সেও তো একটা মানুষ, তার তো বিশ্রাম দরকার। গতি মেনে চলতে হবে। সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে।

এক দিনে রেকর্ড দেড় শ সেতু উদ্বোধন : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দেশের আট বিভাগের ৩৯ জেলায় দেড় শ সেতু উদ্বোধন করেছেন। এটি এক দিনে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক সেতু উদ্বোধনের ঘটনা, যা দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করবে। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে নবনির্মিত সেতুগুলোর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল উন্মোচন এবং সড়ক পরিবহন চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।

সেতুগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০টি, ঢাকায় ৩২টি, চট্টগ্রামে ২৭টি, রাজশাহীতে ২২টি, খুলনায় ১২টি, বরিশাল ও রংপুরে আটটি করে এবং সিলেটে একটি রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে তিনি গতকাল মহাসড়কের ১৪টি ওভারপাসও উদ্বোধন করেন যা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া তিনি ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দুটি বড় সেতু, কেওয়াটখালী সেতু এবং রহমতপুর সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হবে।

১৪টি ওভারপাসের মধ্যে আটটি রাজশাহী বিভাগে এবং ছয়টি রংপুরে। প্রকল্পগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) অধীনে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর মিরপুরে ১০৫ দশমিক ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছরের জন্য স্বয়ংক্রিয় যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র (ভিআইসি); তেজগাঁওয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের একটি নবনির্মিত ভবন এবং ময়মনসিংহে বিআরটিসির বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

ঢাকার মিরপুর বিআরটিএ এবং ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষ এ কর্মসূচিতে যুক্ত হন।

সর্বশেষ খবর