শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

উচ্ছ্বাসে শুরু, হতাশায় শেষ

উচ্ছ্বাসে শুরু, হতাশায় শেষ

মাহমুদউল্লাহর শেষ চেষ্টায়ও বড় সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ -এএফপি

পাহাড়ের কোলঘেঁষা স্টেডিয়ামের যে দিকে চোখ যায়, শুধু নীল আর নীল! দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল, নীল চাদরে ঢেকে আছে এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ তলা গ্যালারি। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শুভমান গিলদের ব্যাটিং সৌকর্য দেখতে উপচে পড়েছিল নীল জার্সিধারীরা। ভক্তদের হতাশ করেননি প্রিয় ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে বিরাট কোহলি। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ক্রিকেটার পুণেতে তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস খেলে স্বদেশিদের শুধু উৎসবে ভাসাননি, ভাসিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসানবিহীন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। নান্দনিকতার সেরাটা উপহার দিয়ে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন কোহলি। দলের উইনিং শটটি সাবেক অধিনায়ক খেলেছেন ছক্কা হাঁকিয়ে। তার ওই ছক্কায় ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি তুলে টানা চতুর্থ জয় উপহার দিয়ে ভারতকে সেমিফাইনালের পাইপলাইনে তুলে দিয়েছেন। ৭ উইকেটের শোচনীয় হারে বাংলাদেশ প্রায় ছিটকে পড়েছে বিশ্বকাপ থেকে। যদিও বাকি আছে আরও পাঁচ ম্যাচ। সাকিবের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত এখনো স্বপ্ন দেখতে বলেছেন, ‘একটি জয় পুরো মোমেন্টাম বদলে দিতে পারে। বাকি আছে আরও পাঁচ ম্যাচ। এখনো ৩-৪টি জয় পাওয়া সম্ভব।’ আসলেই কি সম্ভব স্বপ্ন দেখা? কোহলির সেঞ্চুরির ম্যাচে টাইগারদের শিবিরে শুরুতে ছিল উচ্ছ্বাস। শেষে হতাশা। পুণেতে টাইগারদের ম্যাচের চিত্র ছিল এমনই। ম্যাচটি ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। সেমিফাইনালে খেলতে স্বাগতিকদের হারাতেই হতো টাইগারদের । এমন সমীকরণের ম্যাচ শুরুর আগেই বড় ধাক্কা লাগে বাংলাদেশের। কুঁচকির টানে ম্যাচ থেকে শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তবে ম্যাচের দিন নয়, আগের রাতেই চূড়ান্ত হয় সাকিবকে না খেলানোর। সাকিবকে ছাড়া পরিবর্তিত একাদশ নিয়ে খেলে টাইগাররা। কিন্তু দলের পারফরম্যান্সে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং হারের বৃত্তেই আটকে গেছে। ভাঙতে পারেনি কোনোভাবে। দুই দলের সাম্প্রতিক সমীকরণও কাজে লাগেনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের পর স্বাগতিক ভারতের কাছে হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে নাজমুল শান্ত, লিটন, তানজিদরা উড়ে যাচ্ছেন মুম্বাই। এবার নিয়ে টানা চার বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। ২৪ অক্টোবর ভারতের ‘বাণিজ্য নগরী’ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। হারের পর সেমির স্বপ্ন টিকে আছে কাগজে কলমে। এজন্য পরের পাঁচ ম্যাচে টানা জিততে হবে।

আগের তিন ম্যাচের ধাক্কা সামলে গতকাল দারুণ সূচনা করেন দুই ওপেনার তানজিদ ও লিটন। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দুই ওপেনার ১৪.৪ ওভারে ৯৩ রানের জুটি গড়েন। যা বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। দুই ওপেনার আগের তিন ম্যাচের ব্যর্থতাকে কফিন চাপা দিয়ে রেকর্ডগড়া জুটি গড়েন। আগের ম্যাচ তিনটিতে ওপেনিং জুটিতে রান যথাক্রমে ১৯, ১৪ ও ০। গতকাল ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেন দুজনে। তানজিদ ৪৩ বলে ৫১ রান করেন ৫ চার ৩ ছক্কায়। লিটন ৮২ বলে ৬৬ রান করেন ৭ চারে। বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে। নর্দাম্পটনে ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন মেহেরাব হোসেন অপি ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। ভারতের বিরুদ্ধে ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ ১২০ রানের জুটি ২০১৮ সালে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে। লিটন ও মেহেদী মিরাজ করেছিলেন। গত দুই বছর ওপেনিং জুটি নিয়ে দারুণ ক্ষরায় ভুগছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত সাতটি জুটি খেলেছে ওপেনিংয়ে। গত দুই বছরে ওপেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি ১০ বার জুটি গড়েছেন তামিম ইকবাল ও লিটন। আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০২ রানের অপরাজিত জুটি গড়েছিলেন দুজনে। এরপর সর্র্বোচ্চ ৯৩ রানের জুটি তানজিদ-লিটন জুটির। দুই ওপেনারের দিনে দারুণ ব্যাটিং করেছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। ৪৬ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলার পথে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে হাজার রানের ক্লাবে নাম লিখেছেন মুশফিক। ৩৩ ম্যাচের ৩২ ইনিংস তার রান ১০৩৪। সাকিব প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হাজারি ক্লাবে নাম লেখান। ১ হাজার ২০১ রান করেছেন তিনি। গতকাল মাহমুদুল্লাহ ৭ নম্বর পজিশনে নেমেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩৬ বলে ৪৬ রান করেন।

 

সর্বশেষ খবর