শিরোনাম
শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট

সেই মিঠুর সম্পদ ক্রোক, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

তিনি  সাংবাদিকদের বলেন, মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে দুদকে একটি অনুসন্ধান চলমান। গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে তিনি এখন দেশে অবস্থান করছেন। তদন্তের স্বার্থেই এসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে মিঠুর সম্পদ বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে এখন কোনো তথ্য নেই। এ ছাড়াও দুদক সচিব মাহবুব আরও জানান, আপন জুয়েলার্সের স্বত্বাধিকারী আজাদ আহমেদ ও দিলদার আহমেদের বিরুদ্ধেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলার অনুমোদন দিয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজের নামে প্রভাব বিস্তার করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার স্থাবর ও অস্থাবর ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৩৮ টাকা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১০ ও ১৪ ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর ১৮ ধারার বিধানমতে জব্দ করা হয়েছে। এর আগে বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে পৃথক আবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়। কমিশনের অনুমোদনক্রমে অনুসন্ধানকারী দলের প্রধান উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান এমন আবেদন করেন। এর মধ্যে মিঠুর বিদেশগমন রহিত করতে বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল শাখা (এসবি) বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। অন্যদিকে ওইদিনই তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অবরুদ্ধ করতে মহানগর স্পেশাল জজ আদালতে আবেদন করা হয়। আবেদনে জব্দ করা সম্পদের মধ্যে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৫৭ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ২৩৮ টাকা অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মিঠু সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ ও উন্নয়ন কাজে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার মধ্যে দেশের ১২ হাসপাতালের কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে অনুসন্ধানে। হাসপাতালগুলো হলো- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল মৌলভীবাজার, জেনারেল হাসপাতাল গোপালগঞ্জ, আই এইচ টি সিলেট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল এবং রাজধানীর সিএমএসডি। এসব হাসপাতালে মিঠু সিন্ডিকেট করে অতি উচ্চ মূল্য দেখিয়ে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ, দরপত্রের শর্তানুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালামাল সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন ও অপ্রয়োজনীয় এবং অযাচিত মালামাল সরবরাহ করেছেন।

মিঠুর বিরুদ্ধে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর বানানী ডিওএইচএস এলাকার রোড-৪/এ-তে ৫ কাঠা জমিতে পাঁচ তলা বাড়ি, বানানীর ৬ নম্বর রোডের ব্লক সিতে ১৮২৫ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডে ৫.২৫ কাঠা জমিতে চার তলা বাড়ি, একই এলাকার ৫ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডে ছয় তলা বাড়ি, গুলশানের সুবাস্তু নজর ভিলায় ৩৭২৫ ও ৫৮৫ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও দুটি কার পার্কিং, দক্ষিণ কল্যাণপুরের ১ নম্বর রোডে ১৫৮৩ বর্গফুট ফ্ল্যাট, উত্তরার ১৫সি রোডের ৩ কাঠার দুটি প্লট, টঙ্গী শিল্প এলাকায় ২ বিঘা জমি ও ভবন এবং রংপুরের বুড়িহাট রোডে কয়েক কোটি টাকার বাড়ি। এ ছাড়াও একোয়া কালচার ফার্মস লিমিটেড, জিএমজি এয়ারলাইনস, নর্থ চিকস প্রাইভেট লিমিটেড, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, কছিল উদ্দিন মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বায়ো মেডিকেল মার্চেন্টাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও আইপাইওনির হিটাসি প্রাইভেট মেডিকেলে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে শেয়ার বাজারে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, ব্যক্তিগত দুটি গাড়ি, সাউথইস্টসহ বিভিন্ন ব্যাংকে শত কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য খাতে সব ধরনের টেন্ডার ও কেনাকাটায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল মিঠুর। আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশেও বিপুল সম্পদ রয়েছে তার। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মাস্ক-পিপিই ক্রয় দুর্নীতির অনুসন্ধানে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে তলব করা হলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হাজির হননি তিনি।

সর্বশেষ খবর