রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাতাসে শুধুই বিষ

বায়ুমান সূচকে টানা ১৩ দিন অস্বাস্থ্যকর বাড়ছে ঠান্ডা-কাশি বেশি আক্রান্ত বৃদ্ধ শিশুরা

শামীম আহমেদ

বাতাসে শুধুই বিষ

বৃষ্টিপাত থামতেই ফের বিষাক্ত বায়ুর কবলে ঢাকাবাসী। অস্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিয়ে শুরু হচ্ছে প্রতিটি সকাল। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই প্রতিনিয়ত দূষণের মাত্রা বাড়ছে। ৯ অক্টোবর থেকে টানা অস্বাস্থ্যকর রয়েছে ঢাকার বাতাস। মধ্য অক্টোবরেই দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে এ শহরের নাম। প্রতি বছর শীতকালে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়ে ঢাকাবাসী। এ বছর অক্টোবরেই দূষণে বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে গেছে জনবহুল এ নগরী। বায়ুদূষণ বাড়তে শুরু করায় ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ঠান্ডা-কাশি। হাতপাতালেও বাড়ছে ভিড়। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, শিশুরা। রাজধানীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমনি এলাকার বাসিন্দা রুকাইয়া ইসলাম বলেন, এক মাস ধরে তার দুই বাচ্চার জ্বর-ঠান্ডা-কাশি ছাড়ছেই না। ওষুধ খাওয়ালে কিছুটা ভালো হচ্ছে, আবার আক্রান্ত হচ্ছে। খুশখুশে কাশি লেগেই থাকছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার নিয়মিত বিভিন্ন শহরের দূষণমাত্রা পরিমাপ করে। প্রতিষ্ঠানটির বায়ুমান সূচকে স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে নির্মল বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সহনশীল, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ওপরের স্কোরকে দুর্যোগপূর্ণ ধরা হয়। ৯ অক্টোবর থেকে স্কোর কখনো ১৫১-এর নিচে নামেনি। ঢাকায় গত জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারিতে মোট নয় দিন রাজধানীর বাতাসের মান ছিল দুর্যোগপূর্ণ, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বৃষ্টির কারণে গত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বাতাস অনেকটাই সহনশীল ছিল। ২ আগস্ট সকাল ৯টায় আইকিউএয়ারের বায়ুমান সূচকে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ৫৭, যা সহনশীল হিসেবে বিবেচিত। তখন বিশ্বব্যাপী দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল ৩৫তম। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত কমায় দূষণ বাড়ে। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাত হওয়ায় পরদিন সকালে আবার সহনশীল হয় বাতাস। সকাল ১০টায় একিউআই স্কোর ছিল ৯৯, যা আগের দিন ছিল ১১২। বৃষ্টি হয় অক্টোবরের শুরুতেও। ফলে ৩ অক্টোবর বায়ু ছিল সহনশীল, একিউআই স্কোর ছিল ৭৭। তবে ৯ অক্টোবর থেকে প্রতিদিনই রাজধানীর বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। ১০ অক্টোবর একিউআই স্কোর ছিল ১৮২। ১৪ অক্টোবর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকার একিউআই স্কোর ওঠে ২২৩, যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। দূষিত নগরীর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে ঢাকার নাম। এর পর থেকে নিয়মিত দিনের কোনো না কোনো সময় দূষিত নগরীর তালিকায় শীর্ষে উঠে আসছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-২০২৩’-এ দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের সব মানুষের গড় আয়ু কমছে দুই বছর চার মাস। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গড় আয়ু কমছে ছয় বছর আট মাস। আয়ুষ্কাল কমানোর ক্ষেত্রে বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার দূষণ বাংলাদেশে মানবস্বাস্থ্যের জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম হুমকি বলে জানানো হয়। স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিনিয়ত শ্বাসতন্ত্রের রোগী বাড়ছে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজিজেস অব দ্য চেস্ট অ্যান্ড হসপিটালে ২০২১ সালে আউটডোর এবং জরুরি বিভাগ মিলিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। সাত বছর আগে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৮৫ হাজার। গবেষণায় দেখা গেছে, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণকাজ থেকে ৩০ শতাংশ, ইটভাটা ও শিল্পকারখানা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ, আন্তদেশি বায়ুদূষণ থেকে ৬.৫ শতাংশ, গৃহস্থালি ও রান্নার চুলার কাজ থেকে ৮.৫ শতাংশ এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৮ শতাংশ বায়ুদূষণ ঘটছে। নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ।

 

সর্বশেষ খবর