রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আন্দোলন করুন দুর্বৃত্তায়নে ছাড় নয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্দোলন করুন দুর্বৃত্তায়নে ছাড় নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত এবং আরও অনেকেই মাঠে। আন্দোলন করুন, আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু তারা যদি আবার ওই রকম অগ্নিসন্ত্রাস, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না। এটা বাস্তবতা। গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন এবং আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারও ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে যাতে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুত শেষ করতে আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এরা এত অন্যায় করেছে। এদের বিচারকাজ কেন দ্রুত হবে না? এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে। এদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল এখন আন্দোলনের সুযোগে সামনে আসছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। এই অপরাধীরা যাতে যথাযথ সাজা পায় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারহীনতা যেন না চলে, ন্যায়বিচার যেন মানুষ পায়। রাজধানীতে এবারই প্রথমবারের মতো হলো আইনজীবীদের মহাসমাবেশ। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা করেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মেয়র ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ এম আমিন উদ্দিন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু প্রমুখ। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতে অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধাসম্পন্ন নবনির্মিত বার কাউন্সিল ভবনের রেপ্লিকা তুলে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশন সেই সঙ্গে নতুন করে ফিলিস্তিনের ওপর হামলা হয়েছে। হাসপাতালে হামলা করে নারী-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আছেন রিজার্ভ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। অথচ জাতির পিতা ১৯৭২ সালে যখন শাসনভার হাতে নেন কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনো মুদ্রা ছিল না। খাদ্য ছিল না। সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতার হাত ধরে বাংলাদেশের বিচারকাঠামোর গোড়াপত্তন ঘটে। জাতির পিতা আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড করে দিয়ে যান। জাতির পিতা আমাদের যে পদক্ষেপ দিয়ে গেছেন সেই পথ ধরে আমরা চলি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত এ দেশে মানুষের ওপর আক্রমণ করে। আইনজীবী ও বিচারকের ওপর হামলা করে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালায়। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বব্যাপী কিছু মন্দাভাব যাচ্ছে। তার হাত থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায়নি। তবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আইনের শাসন, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায় সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচারব্যবস্থার মান উন্নয়নে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল বাংলাদেশ ছিল সন্ত্রাসীদের দেশ। জঙ্গিদের দেশ, দুর্নীতির দেশ। দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তারা দেশের অর্থ পাচার করেছে। আমাকে বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। দমে যাওয়ার না। নিজের জীবনের চাওয়াপাওয়া নিয়ে রাজনীতি করি না। রাজনীতি করি এ দেশের মানুষের জন্য। কাজেই আমার সংগ্রাম আমি চালিয়ে যাই। মানুষের কল্যাণে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিচার বিভাগ এবং আইনজীবীদের জন্য গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যেন কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা না হয়। স্মার্ট জুডিশিয়ারি করার উদ্যোগ হিসেবে ই-জুডিশিয়ারি চালু করেছি। জেলে ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনগুলো সংশোধন করে যুগোপযোগী করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে জেলায় জেলায় আইনজীবীদের জন্য বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ তাঁর সরকার নেবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি জানি একটি দাবি আছে, আইনজীবী ভবন করে দেওয়ার। আর্থিকভাবে যত সচ্ছলতা আসবে, ধীরে ধীরে সব জেলায় এটা করে দিতে পারব। তবে এখানে একটা শর্ত আছে, সেখানে আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও ফান্ড থাকতে হবে। আপনারা একটা ফান্ড গঠন করেন, সেখান আপনারাও কিছু দেন আমিও দেব। সঙ্গে সঙ্গে আমার একটি অনুরোধ থাকবে- আপনারা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি আপনাদের কল্যাণ ফান্ড, যেটা জাতির পিতা করে দিয়েছেন, আমিও বিভিন্ন সময় দিয়েছি, সেটাতে আমি আরও ৩০ কোটি টাকা দেব। আপনারাও সাধারণ আইনজীবীরা এতে কন্ট্রিবিউট করবেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হব, তত বেশি আইনজীবী থেকে শুরু করে সবার জন্য সুযোগ অবারিত করে দিতে পারব। আসুন সবাই মিলে সেই বাংলাদেশ গঠনে কাজ করি। আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন। যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যেন সাজা পায় সেজন্য কাজ করবেন। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে আমাকে আগেই গ্রেফতার করেছে। যখন গ্রেফতার করেছে, আপনারা আইনজীবীরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত একটার পর একটা মামলা দিয়েছে। আমাকে হয়রানি করেছে। আমি কিন্তু টলিনি। নিম্ন আদালতের পাশাপাশি উচ্চ আদালতের আইনজীবীরাও পাশে ছিলেন। এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। জাতির পিতার হাত ধরে বাংলাদেশে বিচারকাঠামোর গোড়াপত্তন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার নয় মাসের মাথায় কেবল একটি সংবিধানই আমাদের দেননি, ’৭২ সালে তিনি ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার’ জারি করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে তাদের জন্য ৪৪ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেন এবং ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড গঠন করে দেন। তিনিই পাকিস্তান আমলের আইন পরিবর্তন করে নারীদের বিচার বিভাগে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করে যান। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ’৯৬-পরবর্তীতে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে প্রথম উচ্চ আদালতে নারীদের বিচারক হওয়ার ব্যবস্থা এবং দেশে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি বলেন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পদক্ষেপ জাতির পিতাই শুরু করে যান। সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্র প্রস্তুতসহ যুদ্ধাপরাধের বিচারও শুরু করেছিলেন। ’৭৫-এর বিয়োগান্ত অধ্যায় স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে জিয়াউর রহমানের সহায়তায় বেইমান মোশতাক ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু টিকতে পারেনি। আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে আসেন জিয়া। ক্ষমতা দখল করেন। একাধারে সেনাপ্রধান আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতির ঘোষণা করেন। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করেন। নির্বাচনপ্রক্রিয়া ধ্বংস করে নিজেই দল গঠন করে কারচুপি করে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি দিয়ে সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করেন। খুনিদের জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসায়। বাবা-মা হত্যার বিচার চাইতে পারবেন না, খুনিরা ক্ষমতায়- এরকম একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ’৮১ সালে একরকম জোর করে দেশে ফিরে আসার কথা স্মরণ করেন তিনি। তিনি বলেন, সে সময় আমি দেশে ফিরে দেখি ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু লোকের ভাগ্য উন্নয়ন করেছে। কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াই। মানুষের কষ্ট-দুর্দশা দেখি। পরে ২১ বছর পর আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। বিচার বিভাগের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১-এ বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেছিল। তারা দেশের অর্থ পাচার করেছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দেশ বানিয়েছে। সারা দেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। তারা দেশকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করেছিল। আর আজকে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। কোনো দিক থেকে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই।

সর্বশেষ খবর