রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

তদন্তে অর্থ পাচারের ২ শতাধিক মামলা

মাহবুব মমতাজী

অর্থ পাচারের ২ শতাধিক মামলা তদন্তাধীন আছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এ ছাড়া শতাধিক অর্থ পাচারের মামলা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি বলছে, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তদন্তাধীন আছে ১০৪টি মামলা।  ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধ্যাদেশ জারি করে দুদককে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা এবং তদন্ত করার এখতিয়ার দেয়। এর আগের বিধান ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ মামলা তদন্ত করবে। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে এ সংক্রান্ত অপরাধের মামলা দায়ের ও তদন্তে দুদকসহ, সিআইডি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস বিভাগ এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে এখতিয়ার দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সিআইডিতে মানি লন্ডারিংয়ের মামলাগুলোর বিষয়ে মোবাইলফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। জানা গেছে, গত বছর পর্যন্ত অন্তত ৬৯৭ জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করেছে দুদক। সন্দেহভাজনদের মধ্যে ২৩৪ জন ব্যবসায়ী, ১২৮ জন রাজনীতিবিদ এবং ২২৯ জন সরকারি কর্মকর্তা। দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর গুলশান থানায় ব্যবসায়ী মনিরুল কবিরের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে। মামলায় অভিযোগ ছিল, তিনি ভুয়া চালানের মাধ্যমে ৪৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কানাডায় পাচার করেছেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ব্যবসায়ী মনিরুল কবিরকে একমাত্র অভিযুক্ত করে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে এই অভিযুক্তকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর জেলা জজ আদালত। এরপর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধন করে বিচারের এখতিয়ার দেওয়া হয় বিশেষ জজ আদালতকে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে মামলাটি বদলি হয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ এ। মামলাটিতে ছয়জন সাক্ষীর নাম থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত তাদের একজনও সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাননি। এই মামলায় কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষী ছিলেন। তাদের বেশির ভাগই অবসরে গেছেন, দুজন মারা গেছেন। ব্যাংকের নথিপত্র অনুযায়ী মামলার পলাতক এই আসামির ঠিকানা গুলশান এভিনিউ দেখানো হয়েছে, সেটিও ভুয়া। মামলার বিচার ঝুলে আছে ১৯ বছর ধরে।

সিআইডিতে তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে পিরোজপুরভিত্তিক এহসান গ্রুপের অর্থ পাচারের মামলাটিও আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শরিয়াহসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের প্রচারণা চালিয়ে মাল্টিপারপাস কোম্পানির নামে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। এদের বিরুদ্ধে ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য জানালেও এত বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছে না সিআইডি। এহসান গ্রুপের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনার পর প্রাথমিকভাবে মাত্র ১০১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।  ৮৭০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে এক রপ্তানিকারকের বিরুদ্ধে শুল্ক গোয়েন্দার আলোচিত ১৫ মামলা এখনো তদন্তাধীন বলে জানা গেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানায়, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য আমদানির আড়ালে ৮৭০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা পাচারের অভিযোগে এক রপ্তানিকারকের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাগুলো করেন সংস্থাটির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিটন চাকমা, শামসুন নাহার ও আছমা বেগম। তারা সে সময় জানিয়েছিলেন, আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন হেনান এগ্রো এলসি ও এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি পোলট্রি ফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারি ঘোষণায় ১২টি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমদানি নিষিদ্ধ ও আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্য খালাসের অভিযোগে এসব কনটেইনার আটক করা হয়। পরে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে তল্লাশি করে কনটেইনারগুলোতে বিপুল পরিমাণ সিগারেট, এলইডি টেলিভিশন, ফটোকপিয়ার মেশিন ও মদ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর পল্টন মডেল থানায় একটি মানি লন্ডারিংয়ের মামলা হয়। মামলা নম্বর-৫০। মামলাটি তদন্ত করে দেখা যায়, ওই আমদানিকারক ছয়টি কনটেইনারের মালামাল আটকের আগেই হেনান আনহুই এগ্রো এলসি ৩২টি এবং এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি ৪৬টি মোট ৭৮টি কনটেইনার পণ্য মেশিনারিজ ঘোষণায় ১৫টি এলসির বিপরীতে খালাস নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর