সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপির নানামুখী প্রস্তুতি

নেতা-কর্মীরা সড়কে বসে পড়বেন না বললেন মহাসচিব

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির ডাকা ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। দলের নীতিনির্ধারকরা ওইদিন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশে স্মরণকালের লোকসমাগম ঘটাতে চান। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে- ২৮ অক্টোবর রাজপথ থাকবে তাদের  দখলে। দাবি আদায়ে ওইদিন বিএনপি রাজপথে অনির্দিষ্টকালের জন্য বসে যেতে পারে এমন আলোচনাও রয়েছে নানা মহলে। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর সমাবেশ থেকে নেতা-কর্মীরা সড়কে বসে পড়বে না। সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। নেতা-কর্মীরা  আসবে, সমাবেশ সফল করে যার যার এলাকায় ফিরে গিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করবে।

বিএনপির প্রস্তুতি : সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আবেদন করেছে বিএনপি। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে পর্যাপ্ত কর্মী-সমর্থককে ঢাকায় আনতে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ের নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মিটিয়ে ফেলারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি পান নজরুল ইসলাম মঞ্জু। মঞ্জুসহ অনেকের অব্যাহতি তুলে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সব কর্মসূচিতেই তিনি অংশ নেন। ২৮ অক্টোবরের ঢাকার মহাসমাবেশেও নেতা-কর্মী নিয়ে অংশ নেবেন। এদিকে গতকাল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির যৌথসভায় সমাবেশ সফল করতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসমাবেশ সফল করতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন। যেসব বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য আছেন তারা বিভাগগুলোতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যথায় ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয় করছেন। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায়ও একজনকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জনগণকে মহাসমাবেশে সম্পৃক্ত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

দলের দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের মূল লক্ষ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ঠেকানো। সে জন্য ২৮ অক্টোবরের পর লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিতে চান। সেই লক্ষ্যে তফসিলের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকে কঠোর কর্মসূচি শুরু করতে চায় বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা। এ সময় ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশেও একযোগে আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। রাজধানীর আন্দোলনেই থাকবে মূল লক্ষ্য। নভেম্বরের শুরুতে, এমনকি মহাসমাবেশের পরের দিন থেকেও শুরু হতে পারে মহাযাত্রার ওই কর্মসূচি। যা ঘেরাও দিয়ে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভবনমুখী ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

নেতা-কর্মীরা সড়কে বসে পড়বেন না : ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ওইদিন ঢাকায় বসে পড়ার কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি বসে পড়ার জন্য ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি দেয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মহাসমাবেশ নিয়ে ভুল প্রচারণা চালাচ্ছে। ফখরুল আরও বলেন, ওইদিনের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসবেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও বাধা দেবেন না, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবেন না। বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীকে ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলা হয়নি। তারা আসবে, সমাবেশ সফল করে এলাকায় ফিরে গিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য অপেক্ষা করবে।

সর্বশেষ খবর