মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
আলোচনায় ২৮ অক্টোবর

গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়েই চলছে বিএনপির মহাসমাবেশ প্রস্তুতি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণার পর ছয় দিনে ৬২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ৪৯টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২ হাজার ৯৩০ জনকে। গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়েই চলছে বিএনপির মহাসমাবেশ প্রস্তুতি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে যেন নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে না পারেন সে জন্য গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সবকিছু মাথায় রেখে সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।   

জানা যায়, ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি স্ব-স্ব অবস্থানে হার্ডলাইনে রয়েছে। দুই দলই ওইদিন রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি মহাসমাবেশ করবে। মহাসমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই দলের নেতা-কর্মীরাই। তবে গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। বিএনপি যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে, তেমনই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে নেতা-কর্মীদের রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে নেতা-কর্মীদের চলছে নির্ঘুম প্রস্তুতি। প্রতিদিনই গ্রেফতার হচ্ছেন দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। তাদের ভাষ্য, বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই টার্গেট হচ্ছেন বেশি। গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেও রক্ষা পাচ্ছেন না তারা। গ্রেফতার থেকে রক্ষা পেতে বিএনপি কার্যালয়েও আসছেন না নেতা-কর্মীরা, থাকছেন না নিজ বাসায়ও। এদিকে সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে আসতে বাধার আশঙ্কা থাকায় ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই রাজধানীতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি।  

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবরের জনতার উত্তাল ঢেউ ঠেকাতে সরকার গণগ্রেফতার করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে। তারপরও বিএনপির মহাসমাবেশের ঢেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি বলেন, এ সরকারের কোনো গণভিত্তি নেই। তাই আতঙ্ক থেকে এগুলো করছে। কোনো নেতা-কর্মী নিজ এলাকায় থাকতে পারছেন না।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমাবেশের এক দিন আগে থেকে গ্রেফতার করা শুরু হয়। সেদিন রাত ১০টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই সময়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকা থেকে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। কোর্ট থেকে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে কোর্ট প্রাঙ্গণেই আটক করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সাত্তারকে। এ ছাড়া কাকরাইলে মেরিনা আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে ৫১ জনকে আটক করা হয়। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা করছেন, ২৮ অক্টোবরের আগের কয়েকদিনে ধরপাকড়, মামলা আরও বাড়তে পারে। চূড়ান্ত আন্দোলন ও গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন কৌশল নির্ধারণে দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের সিরিজ বৈঠক অব্যাহত আছে। এদিকে ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দিক থেকেও হামলা, বাধা ও পাল্টা কর্মসূচি আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি। গত ডিসেম্বর থেকেই বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা-কর্মসূচি দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। সামনের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সরকারি দল থেকেও শক্ত বাধা আসতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে। সরকার উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চাইছে। তিনি বলেন, কয়েকদিনে বিনা উসকানিতে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর