মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সুইস বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

সুইস বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেডএস) বিনিয়োগের জন্য সুইস উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, তাঁর সরকার একটি ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারি গড়ে তুলতে চায়। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো সিগফ্রিড রেংগলি তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বাসস

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা (এসইজেডএসে) জমি দেব। তারা (সুইস উদ্যোক্তারা) বাংলাদেশে একটি মিনি সুইজারল্যান্ড তৈরি করতে পারেন।’ ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিতে রূপ দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। সুইস কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও জোরদারে কাজ করে যাবেন। তিনি গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রদূত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ড একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নই তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য। উন্নয়নের মেরুদন্ড মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চরম দারিদ্র্যের হার শূন্য, অন্তত ১ শতাংশে নামিয়ে আনতে অনেক কর্মসূচি নিচ্ছি।’ প্রেস সচিব জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর লন্ডনে অস্ত্রোপচারের পর সুইস সরকারের আমন্ত্রণে সুইজারল্যান্ড সফরকালে তাঁর সঙ্গে তিনিও ছিলেন। সংযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বিমানবন্দরের উন্নয়ন করছে যাতে বাংলাদেশ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে সেতুবন্ধ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রদূতকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সুইস রাষ্ট্রদূত শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন, যা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে সুইস স্বীকৃতির জবাবে সুইজারল্যান্ড সরকারকে পাঠিয়েছিলেন। চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি (চিঠি) জাদুঘরে রাখা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং ঢাকায় সুইস মিশনের উপপ্রধান করিন হেনচোজ পিগনানি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বেলজিয়াম সফরে যাচ্ছেন আজ : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বেলজিয়ামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন। তিনি ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইনের আমন্ত্রণে বেলজিয়াম যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ২৫-২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে’ যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বাসসকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট (বিজি ২০৭) বেলা ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) ছেড়ে যাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন রবিবার তাঁর মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ব্রাসেলস সফর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ফোরামে যোগ দেওয়ার ফাঁকে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের নেতার সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৫ অক্টোবর সকালে ইসির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপীয় বাণিজ্য কমিশনার ভালদিস ডোমব্রোভস্কিসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইসি প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৩৫ কোটি ইউরোর একটি ঋণ সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

ইউরোপীয় কমিশন এবং ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর একটি অনুদান চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউরোপীয় কমিশনের মধ্যে একটি ১২ মিলিয়ন ইউরো অনুদান চুক্তিও স্বাক্ষরিত হবে। এ সফরে বাংলাদেশ সরকার এবং ইউরোপীয় কমিশন বাংলাদেশের সামাজিক খাতে ৭০ মিলিয়ন ইউরোর পাঁচটি বিভিন্ন অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর করবে। একই দিন শেখ হাসিনা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ এবং ভাষণ দেবেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ার্নার হোয়ার বৈঠক করবেন। সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ইসি কমিশনার জেনেজ লেনারসিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারি বিষয়ক ইসি কমিশনার জুটা উরপিলাইনেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে উরসুলা ভন ডের লেইনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী ২৬ অক্টোবর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। একই দিন বিকালে শেখ হাসিনা বেলজিয়ামে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

টিভি চ্যানেল ইউরোনিউজ এবং পলিটিকো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেবে। ২৭ অক্টোবর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর