বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

লজ্জার হারের দিনে অনবদ্য মাহমুদুল্লাহ

লজ্জার হারের দিনে অনবদ্য মাহমুদুল্লাহ

হারের মধ্যেও লড়াকু ইনিংস খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ -এএফপি

ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে কামব্যাকের বহু নজির রয়েছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটেও রয়েছে কামব্যাকের দারুণ সব গল্প। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ম্যাচে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ভারতকে একাই টেনেছিলেন কপিল দেব। ৮৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপর্যস্ত, তখন ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। ৪০ বছর আগে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। চার দশক পর ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। কিন্তু গতকাল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে যে স্বপ্নের ব্যাটিং করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, হিমালয়সম চাপে থেকেও যেভাবে ৩ অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস খেলেছেন, নিঃসন্দেহে শুধু বিশ্বকাপ নয়, ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা কামব্যাকের গল্প! শুধু কামব্যাকের গল্প নয়, প্রতিকূল স্রোতে সাঁতার কেটে যেভাবে নিজের অবস্থান সংহত করেছেন, যেভাবে নামের প্রতি বিচার করেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এমন রেকর্ড নেই কারও। অদূর ভবিষ্যতে কেউ করতে পারবেন কি না, এ সংশয় থেকে যাচ্ছে। তামিম ইকবাল বিতর্ক সঙ্গী করে বিশ্বকাপ খেলতে আসে বাংলাদেশ। ফিটনেস অজুহাতে বাদ পড়েন দেশসেরা ওপেনার। ফিটনেসের অজুহাতে বাদ পড়ার তালিকায় ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু তামিম বিতর্ক চাপা দিতে দলের সঙ্গে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পান শেষ মুহূর্তে। এরপর বাকি সব ইতিহাস। আফগানিস্তান ম্যাচে সুযোগ পেলেও ব্যাটিং করেননি। ইংল্যান্ড ম্যাচে খেলেননি। চেন্নাইয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে অপরাজিত ৪১, পুণেতে ভারতের বিরুদ্ধে ৪৬ রান করেন। গতকাল প্রিয় ৬ পজিশনে নেমে ১১১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন। ১১১ বলে সাজানো ইনিংসটিতে ছিল ১১টি চার ও ৪টি ছক্কা। ক্যারিয়ারে এটা তার ৪ নম্বর সেঞ্চুরি। কিন্তু বিশ্বকাপে তৃতীয়। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৩ ও পরের ম্যাচে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল সেঞ্চুরির পর বুনো উল্লাসে মেতে ওঠেন। শূন্যে লাফিয়ে ওঠেন। এরপর আল্লাহকে স্মরণ করেন। সেঞ্চুরিটিকে পরিবার ও তার পাশে দাঁড়ানোদের উৎসর্গ করেন, ‘আমি সেঞ্চুরিটিকে আমার পরিবার ও বিপদের সময় পাশে দাঁড়ানোদের উৎসর্গ করলাম।’ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলার পরও বাংলাদেশ ১৪৯ রানে হেরেছে। টানা চার হারে বাংলাদেশ এখন পয়েন্ট টেবিলের ১০ নম্বরে। সেঞ্চুরি করে টিম ম্যানেজমেন্টকে বুঝিয়ে দেন তার প্রতি অবিচারের কথা। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ শুধু বলেন, ‘অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু এখন উপযুক্ত সময় নয় কিছু বলার।’ বিশ্বকাপ খেলার আগে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে বিশ্রাম দিয়েছে। এ বিশ্রামকে একটু বেশিই বলেছেন সাবেক অধিনায়ক, ‘বিশ্রামটা একটু বেশিই হয়েছে।’

সেলুলয়েড নগরী মুম্বাই। নগরীর কেন্দ্রে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। আরব সাগরের তীরঘেঁষা স্টেডিয়ামটিতে আশুতোষ গৌরিকারের বিখ্যাত সিনেমা ‘লগন’-এর মূল চরিত্র ‘ভুবন’ হতে গিয়েও পারেননি মাহমুদুল্লাহ। অষ্টাদশ শতকে ভারতের কোনো এক গ্রামের ওপর ব্রিটিশের চাপিয়ে দেওয়া ‘ল্যান্ড ট্যাক্স’-এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন গ্রামের ছেলে ভুবন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া ক্রিকেট ম্যাচে একাই ব্রিটিশকে হারিয়ে গ্রামের ট্যাক্স মওকুফ করিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জীবন বাজির ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু জেতাতে পারেননি। প্রোটিয়াদের ছুড়ে দেওয়া ৩৮৩ রানের টার্গেটের চাপে নুইয়ে পড়েন সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, তানজিদ তামিম, মুশফিকুর রহিমরা। অলআউট হন ২৩৩ রানে। হেরে যান ১৪৯ রানে। গতকালের সেঞ্চুরির আগে তিন ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর স্কোর অপরাজিত ৪১ ও ৪৬।

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল দক্ষিণ আফ্রিকা। পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই করেছে ৩০০-ঊর্ধ্ব ইনিংস। শ্রীলঙ্কা ৪২৮, ইংল্যান্ড ৩৯৯, বাংলাদেশ ৩৮২। শুধু হেরেছে রান চেজ করতে গিয়ে। প্রোটিয়াদের ছুড়ে দেওয়া ৩৮৩ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারাতে থাকে। এক পর্যায়ে ৫৮ রান তুলতে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। মনে হচ্ছিল ২০১১ সালে বিশ্বকাপে মিরপুরে ৭৮ রানের রেকর্ড ভাঙবে। আফ্রিকান দলটির বিরুদ্ধে দুবার শয়ের নিচে আউট হয়েছে টাইগাররা। গতকাল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরিতে ২৩৩ রান করে তারা।

টস হেরে ফিল্ডিং করে সাকিব বাহিনী। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে ৪৪ রানে আফ্রিকার ২ উইকেট তুলে দারুণ সূচনা করে। ৪০ ওভার পর্যন্ত ম্যাচেও ছিলেন সাকিবরা। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে তিন প্রোটিয়া কুইন্টন ডি কক, হেনরিক ক্লাসেন ও মিলারের আগ্রাসি ব্যাটিংয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা। শেষ ৬০ বলে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১৪৪ রান; যা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ ১০ ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার ১৩১ রান, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে। এ মাঠে আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ১০ ওভারে ১৪৩ রান করেছিল মার্করাম বাহিনী। গতকাল শুধু শেষ ১০ ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েনি আফ্রিকা, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডও স্পর্শ করে। ডি ককের ৭, ক্লাসেনের ৮ ও মিলারের ৪- মোট ১৯ ছক্কা ছিল ইনিংসে। ২০০৮ সালে সেন্ট কিটসে ১৯টি ছক্কা মেরেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সর্বশেষ খবর