বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা
গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে প্রধানমন্ত্রী

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন

সোহেল সানী, ব্রাসেলস (বেলজিয়াম) থেকে

অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন

ব্রাসেলসে আয়োজিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বনেতাদের শান্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার স্বার্থে যুদ্ধ বন্ধ এবং দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের অবশ্যই যুদ্ধ, সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার অবসান ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভিকটিমদের কি দুর্দশা হয়।’ ফোরামে লিখিত বক্তব্যের পাশাপাশি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আবেগঘন বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল ব্রাসেলসের স্থানীয় সময় দুপুরে জিজিএফ কনফারেন্স ভেন্যু প্ল্যানারি হলে আয়োজিত সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হলিডে ভ্রমণে বেলজিয়াম আসি। এখানে বসে জানতে পারি মিলিটারি ক্যু হয়েছে বাংলাদেশে। এতে আমার মা, বাবা, তিন ভাই, ভাবিসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল ১০ বছর। ১৯৭১ সালে আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। আমি এবং আমার মাসহ ছয়জন সদস্যকে বন্দিখানায় আটক রাখা হয়। সেখানে না ছিল আসবাবপত্র, না ছিল খাবারের সরঞ্জাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। আমি জানি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভিকটিমদের কি দুর্দশা হয়। তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছি বিশ্বনেতাদের যুদ্ধ বন্ধ করার। যদি কোনো সমস্যা থাকে তা সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। আমরা মিয়ানমারের ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা সংঘাতে যাইনি। শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছি। আমাদের এটাই পররাষ্ট্রনীতি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়াইনি। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি। আমি এ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে কাউকে দোষারোপ করছি না। অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অর্থ ব্যয় না করে আমাদের উচিত নারী-শিশুর কল্যাণে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় করা। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো শিশুর মুখের রক্তের ছাপ থাকে, তা কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। তাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আহ্বান জানাই যুদ্ধ বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। যুদ্ধের সরঞ্জাম শান্তির জন্য ব্যয় করার আহ্বান জানাই।

উদ্বোধনী ভাষণে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় আরও ভালো প্রস্তুতি এবং পারস্পরিক সম্মান পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্ব বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ প্রত্যক্ষ করছে। তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ সংকট উত্তরণের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও জাতিগুলোর মধ্যে বোঝাপড়ার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা গাজা, ইউক্রেন ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে চলমান যুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং বিশ্বের সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য প্রত্যাশা করি।

ভাষণের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা করতে বাংলাদেশকে জিএসপি+ সুবিধা দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ইইউ সদর দফতরে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমাদের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি+ সুবিধা দেবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইউরোপীয় কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন ডার লেইনে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি)-এর মধ্যে ৩৫০ মিলিয়ন ইউরো অর্থায়ন চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।

তিনি বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রিত ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনই এ সংকটের একমাত্র সমাধান। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি দ্রুত এ সংকটের একটি টেকসই সমাধানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ইইউর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে উরসুলা ভন ডের লেইনের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রুর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী জেভিয়ার বেটেলের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। বিকালে শেখ হাসিনা বেলজিয়ামে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। ২৭ অক্টোবর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর