বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

কী হবে কলকাতায়

শিল্প-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের বর্ণময় এক চরিত্রের শহর কলকাতা। শহরটির ভালোবাসার আরেক নাম ‘সিটি অব জয়’ বা ‘আনন্দনগরী’। অনেকে কলকাতাকে চাণক্যের শহর বলেন। অনেকে আবার ভালোবেসে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, অমর্ত্য সেন, সৌরভ গাঙ্গুলির শহরও বলেন। তবে কলকাতার নাগরিকরা ‘সিটি অব জয়’ বললে উচ্ছ্বসিত হয় বেশি। এ নামের জন্যই কলকাতার সঙ্গে বিশ্ববাসীর সখ্য। ইতিহাসসমৃদ্ধ এ শহরে গতকাল পা রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টানা হারের ভারে নুইয়ে পড়া টাইগাররা কলকাতা থেকে নতুন করে পথ শুরু করতে চায়। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারের পর মিডিয়ার মুখোমুখিতে ‘সেঞ্চুরিম্যান’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দলের মুখপাত্র হয়ে তেমনই বলেছেন,  ‘গোটা দল একটি জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে। একটি মোমেন্টামের অপেক্ষায় আছে।’ সেই মোমেন্টামটা ২৮ অক্টোবর ইডেন গার্ডেনে নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে পেতে চাইছেন ক্রিকেটাররা। ঐতিহ্যবাহী ইডেনে শুধু ডাচ্ বাহিনীর মোকইবলা করবেন না সাকিবরা, ৩১ অক্টোবর খেলবেন বাবর আজমের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কলকাতার ‘সিটি অব জয়’ নামকরণ হয়েছে ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ফরাসি লেখক ডোমিয়ের লাপিয়েঁরের ফরাসি ভাষায় লেখা ‘লা সিটি ডে লা জোয়ে’ থেকে। বইটির ইংরেজি অনুবাদের নাম ‘সিটি অব জয়’। গল্পটি লেখা হয়েছে কলকাতার পাশের হাওড়া স্টেশনের একটি বস্তির জীননযাপন নিয়ে। বস্তিটির নাম ‘আনন্দনগরী’। সেখান থেকেই গল্পটির নাম ‘সিটি অব জয়’। তবে গল্পটি আনন্দ কিংবা সুখকর নয়। কষ্টের, যন্ত্রণার, বেদনার। সেই আনন্দনগরীতে সাকিবরা টানা চার হারের যন্ত্রণা ও কষ্ট নিয়ে উঠেছেন। আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে দারুণ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের চার ম্যাচে সেই ধারাবাহিকতার ছিটেফোঁটারও দেখা মেলেনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র লড়াই করতে পারেননি সাকিবরা। এ না পারার বিষাদের মাঝেও আনন্দের ঝংকার বইয়ে দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দল যখন কোণঠাসা, তখন তিনি টেলএন্ডার ব্যাটারদের নিয়ে খেলে বিশ্বকাপের চলতি আসরে বাংলাদেশের ক্রিকেটার হিসেবে ৩ অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস খেলেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার সেঞ্চুরির সবকটি আইসিসির টুর্নামেন্টে। তিনটি বিশ্বকাপে এবং একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়েন মাহমুদুল্লাহ। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছিলেন। গত পরশু ওয়াংখেড়েতে ১১১ বলে ১১১ রানের ইনিংস খেলেন। পরের ম্যাচগুলোয় জিততে শুধু মাহমুদুল্লাহ কিংবা একক কোনো পারফরম্যান্স নয়, দল হিসেবে পারফরম্যান্স করতে হবে। তা হলেই কলকাতা থেকে মোমেন্টাম পাবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের প্রথম পাঁচ ম্যাচে টাইগার ক্রিকেটাররা সেঞ্চুরি করেছেন সাকল্যে ১টি। প্রোটিয়া ব্যাটার কুইন্টন ডি কক একাই করেছেন ৩টি। হাফসেঞ্চুরি করেছেন টাইগার ব্যাটাররা ৭টি। ২টি করে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। সবচেয়ে বেশি রান লিটনের ২১১ আর মুশফিকের ২০৫। মাহমুদুল্লাহর রান ১৯৮। বোলিংয়ে ৬টি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব, মেহেদি হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম। ৪টি উইকেট নিয়েছেন শেখ মেহেদি। ‘সিটি অব জয়’ কলকাতার ইডেন গার্ডেনে মোমেন্টাম পেতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে সাকিব বাহিনীকে। পারবেন তো?

সর্বশেষ খবর