শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমাবেশস্থল নিয়ে অনড় দুই দল

নয়াপল্টনে বিএনপি, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ, গ্রেফতার তল্লাশি

রফিকুল ইসলাম রনি ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সমাবেশস্থল নিয়ে অনড় দুই দল

সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কাল ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় একই সময় জনসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। আর সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে নয়াপল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সরকার ও বিরোধী উভয় দলই নিজেদের ঘোষিত স্থানে সমাবেশের জন্য আগাম অনুমতি চেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে। কিন্তু গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ডিএমপির কাছ থেকে অনুমতি মেলেনি। পুলিশের অনুমতি না মিললেও দুই দলই ঘোষিত স্থানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে বিএনপির সাবেক জোট মিত্র জামায়াতে ইসলামীও কাল রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বিলুপ্তির পর এবারই প্রথম বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে একই দিনে একই সময়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এদিকে বিএনপির সমমনা দলগুলোও কাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শনিবার বায়তুল মোকাররমে শান্তি সমাবেশের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যেখানেই সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। সমাবেশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে রাজনীতিতে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদন করে আওয়ামী লীগ। একইভাবে ২১ অক্টোবর সমাবেশ করতে ডিএমপিকে অবহিত করে বিএনপি। ২৫ অক্টোবর রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে দুই দলকে চিঠি দিয়ে রাস্তায় সমাবেশ না করে ভিন্ন ভেন্যু বা সমাবেশের স্থান খোঁজার জন্য বলা হয়। গতকাল দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে ডিএমপিকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানানো হয়, নয়াপল্টনে তাদের মঞ্চ তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় নয়াপল্টন ছাড়া বিকল্প জায়গায় সমাবেশ করা সম্ভব নয়। ভেন্যু নিয়ে বিএনপির অনড় অবস্থানের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমের ভেন্যু পরিবর্তন করতে নারাজ। প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে দেশের প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে উভয় পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। দুই দলের পক্ষ থেকে ডিএমপিকে পৃথক চিঠি দিয়ে জানানো হয়, প্রস্তুতির চূড়ান্ত মুহূর্তে তাদের পক্ষে ভেন্যু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এদিকে গতকাল ডিএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ রাস্তায় কাউকে সমাবেশ করার অনুমতি দেবে না। বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিত চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশে সোয়া লাখ লোক আসবে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষ করে রাস্তা ছেড়ে চলে যাবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সকাল ১০টা থেকে সমাবেশ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে। তাদের লোকসমাগম হবে ২ লাখ। 

দুই দলকে ডিএমপি থেকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, সমাবেশে লোকসমাগম কখন শুরু হবে এবং সমাবেশ কখন শেষ হবে? সমাবেশে কত লোকসমাগম হবে? সমাবেশ ঠিক কোন কোন স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে? সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য কোন কোন স্থানে মাইক স্থাপন করা হবে? সমাবেশে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন কি না? সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে কি না? হলে, তাদের সংখ্যা কত? জননিরাপত্তাজনিত কারণে অনুমতি দেওয়া সম্ভব না হলে বিকল্প দুটি ভেন্যুর নাম প্রস্তাব করুন।   

আওয়ামী লীগের সমাবেশ বায়তুল মোকাররম গেটে : বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে অনড় আওয়ামী লীগ। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সাবেক আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী মরহুম সৈয়দ আবুল হোসেনের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। তিনি আরও বলেন, আমরা কিছু বলতে চাই না। সেটা পুলিশ জানে। অনুমতি দেওয়ার মালিক পুলিশ। যারা অনুমতি দেওয়ার মালিক, তারা বুঝবে আর বিএনপি বুঝবে। এখানে আমরা বলার কে? এটা তো আমাদের আওতায় পড়ে না। আওয়ামী লীগও সমাবেশের অনুমতি চেয়ে নিয়েছে।’

সূত্রমতে, ডিএমপি থেকে বিকল্প ভেন্যু দেখতে বলা হলে প্রথমে আওয়ামী লীগ ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, দ্বিতীয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এটা নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে সমাবেশের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় আওয়ামী লীগও ভেন্যু পাল্টানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। গতকাল বিকালে এর আগে ডিএমপিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের কথা জানানো হয়। এর আগে ২০ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে অনুমতি চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর পর পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে বিকল্প আরও দুটি স্থানের নামসহ সাতটি বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়। জবাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ সমাবেশ চলবে। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ তার সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি পল্টন মডেল থানার ওসির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে পত্রের মাধ্যমে আপনি সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো- ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার। আরও জানানো হয়, সমাবেশে লোকসমাগম সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে, সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোকসমাগম হবে, সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপশাহ মাজার, নগর ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় এবং মতিঝিল সড়ক, স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য এসব স্থানে মাইক স্থাপন করা হবে। সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেবে। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। বিএনপি-জামায়াত সারা দেশ থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনেছে। আমাদের সঙ্গে শান্তি ও উন্নয়নকামী ঢাকাবাসী আছে। ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো সন্ত্রাস-নৈরাজ্য প্রতিহত করব। আমাদের সমাবেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়ে তারা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় সেটা জানান দেবেন।’

সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে অনড় প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সব সময় দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অনেক আগেই আমরা সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। পুলিশ চিঠি দিয়ে পৃথক দুটি ভেন্যু দেখতে বলেছে। আমাদের তো সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এ মুহূর্তে অন্যত্র এত বড় সমাবেশ করা সম্ভব নয়। সে কারণে আমরা বায়তুল মোকাররমেই সমাবেশ করব।’ পাশাপাশি দুই দলের এত বড় সমাবেশ এতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীতেও এমন সমাবেশ হয়েছে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। আমরা কোনো উসকানি দেব না। তবে কেউ গায়ে পড়ে বিরোধ বাধাতে এলে ছাড় দেব না।  

নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে অনড় বিএনপি : সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কাল ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। দলটির প্রত্যাশা, তাদের চাহিদা অনুযায়ী নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশের অনুমতি পাবে তারা। পুলিশি অনুমতি না পেলেও নয়াপল্টন ঘিরেই মহাসমাবেশ সফলের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। এ মুহূর্তে নয়াপল্টনের কোনো বিকল্প ভাবছে না রাজপথের বিরোধী দলটি। নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ধরে নিয়েই নেতা-কর্মীরা কে কোথায় থাকবেন সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। বলা হচ্ছে, তাদের পরবর্তী কর্মসূচি হবে লাগাতার। সেই কর্মসূচি সফল করার জন্য মহাসমাবেশের পর নেতা-কর্মীদের ঢাকা না ছাড়তে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এমন প্রচারণাও আছে যে, ঢাকায় এ মহাসমাবেশ দিয়ে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে পা রাখবে প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা বিএনপি। তবে পরবর্তী ধাপের কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে শেষ পর্যায়ের বৈঠক করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। মহাসমাবেশ ঘিরে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণ কেমন হয়, তা দেখেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির হাইকমান্ড জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এক দফার আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে নিয়ে যেতে চায়। তবে তফসিলের পরেও বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির আহমেদ রিজভী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির উদ্যোগে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এ মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক এবং শান্তিপূর্ণ।

এদিকে রাস্তা বাদ দিয়ে যে কোনো মাঠে সমাবেশ করতে পুলিশের পাঠানো চিঠির জবাব দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত পাল্টা চিঠিতে বলা হয়, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ তারা নয়াপল্টনেই করতে চায়। বিকল্প কোনো স্থানে তাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। সমাবেশে ১ থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। বিজয়নগর মোড় ও ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছুদূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সমাবেশে বিএনপি নেতা-কর্মী ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না। সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন। সমাবেশ বেলা ২টায় শুরু হয়ে মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে।

জামায়াতের সমাবেশ শাপলা চত্বরেই : রাজধানীর মতিঝিলে শাপলা চত্বরেই কাল ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এ মহাসমাবেশ সফল করতে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। গতকাল মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

মুজিবুর রহমান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী।

পুলিশের ধরপাকড় তল্লাশি খোকনসহ ৩৩ নেতা-কর্মী গ্রেফতার : আগামীকালের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়। বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভাইয়ের বাসা থেকে ডাকসুর সাবেক জিএস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেফতার করা হয়। দলটির আরও ৩২ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের খবর পাঠিয়েছেন প্রতিনিধিরা।

গতকাল বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, গণগ্রেফতার বলে কিছু হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) রয়েছে, শুধু তাদেরকেই আটক করা হচ্ছে। আইনের বাইরে গিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এর কোনো সুযোগ নেই।

বিএনপির দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির ৩৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ নিউমার্কেট থানার সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. দুলাল, শাহবাগ থানাধীন ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন, আফসু মিয়া, ওয়ারী থানাধীন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সদস্য তানভীর আহম্মেদ ওয়াসিম, শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম ঢালী, কলাবাগান থানাধীন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সিরাজ, লিটন, মাঈনুদ্দিন লালু, রহমত উল্লাহ, লাভলু, সাইদুল, বিপুল, মুগদা থানাধীন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালুর মাঠ ইউনিট বিএনপির সভাপতি মো. সোহাগ, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা তারেক, নিউমার্কেট ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসাদ মাহমুদ পলাশ, গেন্ডারিয়া থানাধীন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি নজরুল ইসলাম কাশু, সদস্য মো. কালাম ও মো. গোলাপ, যাত্রাবাড়ী থানাধীন ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড (পূর্ব) এর সহসাধারণ সম্পাদক মো. ববি, শাহবাগ থানাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. হারুন, নজরুল ইসলাম ঢালী এবং ধানমন্ডি থানা বিএনপি নেতা সুমন, বংশাল থানার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. আলম, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি মোগলটুলি ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম, চকবাজার থানাধীন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান রবিন, চকবাজার থানাধীন ২৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মো. মনিউর রহমান মনির, নিউমার্কেট থানাধীন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মো. হাশেম।

এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে গাইবান্ধায় নাশকতার মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতা-কর্মী, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় নান্নু দাড়িয়া নামে এক বিএনপি নেতা, পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি তৌফিক হাবিবসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী, রংপুরে জামায়াতের ২০ নেতা-কর্মী, খুলনা নগরীতে ১৭ ও জেলায় ৮ বিএনপি নেতা-কর্মী এবং ঠাকুরগাঁওয়ে নাশকতার আশঙ্কায় ও বিভিন্ন মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা : আগামীকালের রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে বাংলাদেশে ভ্রমণ ও চলাফেরার বিষয়ে নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এ সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সতর্ক বার্তায় উল্লেখ করা হয়, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা এবং সারা বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের কাছে এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের কাছে ভিআইপি রোডে। মার্কিন নাগরিকদের সতর্কতা গ্রহণ এবং মনে রাখা উচিত যে, শান্তিপূর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে বিক্ষোভগুলোয় সংঘর্ষে হতে পারে। আপনাকে বিক্ষোভ এড়াতে এবং কোনো বড় সমাবেশের আশপাশে সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া বার্তায় আগামী ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাবেশের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয় এবং এক্ষেত্রে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর