শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এগিয়ে আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির গবেষণা - সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত ১৫৫ আসন, মূল লড়াই ১৪৫টিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ‘বিজয় নিশ্চিত আসন’ রয়েছে ১৫৫টি। মূল লড়াই হবে বাকি ১৪৫টি ‘বিজয় অনিশ্চিত’ আসনে। দুই ক্যাটাগরি মিলিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪৮-১৬৬টি, বিএনপি ১১৯-১৩৭টি, অন্যান্য দল ১৫টি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে একক কিংবা জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন দুই দিকেই এগিয়ে থাকবে আওয়ামী লীগ। গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

গতকাল ইস্কাটন গার্ডেনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত জাতীয় সেমিনার ও সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। ‘ভোটারের মন ও আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. আবুল বারকাত বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় থাকলে আওয়ামী লীগ ১৪৮-১৬৬টি, বিএনপি ১১৯-১৩৭টি, অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে।

গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, ১৫৫টি আসন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ভিত্তি আসন’ বা ‘সম্ভাব্য বিজয় নিশ্চিত আসন’। এগুলোর মধ্যে ৭০টি আসন আওয়ামী লীগ, ৭০টি বিএনপি এবং বাকি ১৫টিতে জেতার সম্ভাবনা আছে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও বিজেপির। তবে বড় দুই দলের মধ্যে যে কোনো দলকে সরকার গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় আরও ৮১টি আসন পেতে হলে ‘দোদুল্যমান ভোটার’দের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। ১৪৫টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের জয়-পরাজয়ে ভূমিকা রাখবেন দোদুল্যমান ভোটাররা। গবেষণার বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্তভিত্তিক হিসেবে দেখা গেছে, দেশের ১৪৫টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৭৮-৯৬টি আসন এবং বিএনপি ৪৯-৬৭টি আসন পেতে পারে। পদ্মা সেতুর কারণে পদ্মা সেতু ভোট লভ্যাংশ হিসেবে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২৩টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের সবকটিতে আওয়ামী লীগ এবং ঢাকাসহ দেশের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের ১২২টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৫-৭৩টি এবং বিএনপি ৪৯-৬৭টি আসন পেতে পারে। আবুল বারকাত জানান, গবেষণায় প্রাপ্ত সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল বহাল থাকলে আওয়ামী লীগের পক্ষে জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে জোট হতে পারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবেও সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে যদি তারা সর্বোচ্চ সম্ভাব্য-আসনে জয় পায়। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ১৪৮ আসন থেকে সর্বোচ্চ ১৬৬ আসনে জয় নিশ্চিত হয়। আর সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল যদি বহাল থাকে তাহলে বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। তবে বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের সম্ভাবনা যতটুকু আছে, তা যথেষ্ট শর্তসাপেক্ষ। এক্ষেত্রে বিএনপিকে অবশ্যই সম্ভাব্য সর্বোচ্চসংখ্যক আসন প্রাপ্তি (১৩৭টি আসন) নিশ্চিত করে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য সবার সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হবে এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই সম্ভাব্য সর্বনিম্নসংখ্যক (১৪৮টি) আসনের বেশি হতে পারবে না। এত বেশি শর্তসাপেক্ষ বিধায়, বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের বাস্তব সম্ভাবনা ক্ষীণ।

বিজয় নিশ্চিত যে ১৫৫ আসন : যেসব দলের পক্ষে একটি আসনের ভিত্তি ভোট বা দলীয় ভোটের হার ৪০ শতাংশ বা তার অধিক হওয়ার কারণে জয় মোটামুটি নিশ্চিত এবং ওই আসনে জিততে দোদুল্যমান ভোটারদের যে পরিমাণ ভোট প্রয়োজন সম্ভাব্য বিজয়ী দল তা সহজেই পেতে পারে ওইটিকে ভিত্তি আসন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে গবেষণাপত্রে। আওয়ামী লীগের ৭০টি সম্ভাব্য ভিত্তি আসন : গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, মাদারীপুর-৩, শরীয়তপুর-১, শরীয়তপুর-২, শরীয়তপুর-৩, ফরিদপুর-১, ফরিদপুর-৪, রাজবাড়ী-২, দিনাজপুর-২, দিনাজপুর-৩, রংপুর-৬, গাইবান্ধা-২, নওগাঁ-১, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৬, নাটোর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-৩, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, খুলনা-১, খুলনা-৩, বরগুনা-১, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-১, ঝালকাঠি-২, টাঙ্গাইল-১, জামালপুর-৩, জামালপুর-৫, শেরপুর-২, ময়মনসিংহ-৭, নেত্রকোনা-৪, কিশোরগঞ্জ-১, কিশোরগঞ্জ-৪, কিশোরগঞ্জ-৬, ঢাকা-৩, ঢাকা-৫, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১১, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৮, গাজীপুর-২, গাজীপুর-৩, নরসিংদী-৪, নারায়ণগঞ্জ-১, নারায়ণগঞ্জ-২, সুনামগঞ্জ-৩, সিলেট-৩, সিলেট-৪, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-১, হবিগঞ্জ-৩, কুমিল্লা-৫, কুমিল্লা-৬, কুমিল্লা-৭, কুমিল্লা-৯, চাঁদপুর-১, চাঁদপুর-৩, চাঁদপুর-৫, নোয়াখালী-৪, চট্টগ্রাম-৬, কক্সবাজার-৪, পার্বত্য রাঙামাটি এবং পার্বত্য বান্দরবান। বিএনপির ৭০টি সম্ভাব্য ভিত্তি আসন : ফেনী-১, ফেনী-২, ফেনী-৩, নোয়াখালী-১, নোয়াখালী-২, নোয়াখালী-৩, নোয়াখালী-৬, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২, লক্ষ্মীপুর-৩, লক্ষ্মীপুর-৪, দিনাজপুর-৬, জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-১, বগুড়া-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৫, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, নওগাঁ-৪, নওগাঁ-৬, রাজশাহী-১, রাজশাহী-৪, রাজশাহী-৫, নাটোর-১, নাটোর-৪, সিরাজগঞ্জ-২, সিরাজগঞ্জ-৫, মেহেরপুর-২, কুষ্টিয়া-৪, চুয়াডাঙ্গা-১, ঝিনাইদহ-২, ঝিনাইদহ-৪, যশোর-৪, যশোর-৬, মাগুরা-২, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-১, বরিশাল-২, বরিশাল-৪, বরিশাল-৫, ভোলা-৩, জামালপুর-৪, নেত্রকোনা-৩, মুন্সীগঞ্জ-৩, নরসিংদী-১, নারায়ণগঞ্জ-৪, রাজবাড়ী-১, হবিগঞ্জ-৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, কুমিল্লা-২, কুমিল্লা-৩, কুমিল্লা-৮, চাঁদপুর-৪, সিলেট-২, চট্টগ্রাম-২, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৭, চট্টগ্রাম-৯, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১৫, চট্টগ্রাম-১৬, কক্সবাজার-১ এবং কক্সবাজার-৩।

অন্যান্য দলের ১৫টি সম্ভাব্য ভিত্তি আসন : জাতীয় পার্টির ১১টি। এগুলো হলো, রংপুর-১, রংপুর-২, রংপুর-৩, লালমনিরহাট-২, লালমনিরহাট-৩, নীলফামারী-১, ঠাকুরগাঁও-৩, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-২, কুড়িগ্রাম-৩ ও চট্টগ্রাম-৪। জামায়াতে ইসলামীর ২টি- চট্টগ্রাম-১৪, কক্সবাজার-২। এনডিপির ১টি-চট্টগ্রাম-১৩ এবং বিজেপির ১টি ভোলা-১।

বিজয় অনিশ্চিত ১৪৫ আসনের ভাগ্য নির্ধারক দোদুল্যমান ভোটাররা

গবেষণাপত্র থেকে আরও জানা যায়, পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক অঞ্চল বা দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলায় সংসদীয় আসন আছে ৬৮টি। এর মধ্যে বিজয় অনিশ্চিত আসনের সংখ্যা ২৩টি। অন্যদিকে, ঢাকাসহ দেশের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের ৪৯ জেলায় সংসদীয় আসন আছে ২৩২টি। এর মধ্যে বিজয় অনিশ্চিত আসন ১২২টি। মোট ১৪৫টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবেন ‘দোদুল্যমান ভোটাররা’। দোদুল্যমান ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন- তা দিয়েই নির্ধারিত হবে ওই ১৪৫ আসনে প্রার্থীর ভাগ্য। এসব ভোটারের মধ্যে এমন ভোটারও আছে যারা ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের আগ পর্যন্ত মনস্থির করতে পারেন না কাকে ভোট দেবেন। প্রার্থীর পক্ষেও সুনির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব নয় এই ভোটার কারা। প্রার্থীরা শুধু জানেন, এসব ভোটার ভোট দেবেন এবং এদের প্রত্যেকের আছে একটি করে ভোট। আর জিততে হলে এই ভোটটিই তার দরকার। এ জন্য বক্তব্যসহ সুনির্দিষ্ট প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এদের মন জয় করে নিতে হবে প্রার্থীকে। সরকারি দল-বিরোধী দল যে বক্তব্যই দিক না কেন, তা ৭০ শতাংশ ভোটারের মন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। একটি গড় আসনে ভিত্তি ভোট বা দলীয় ভোট হিসেবে সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ ভোট পাবে আওয়ামী লীগ, ৩০ শতাংশ বিএনপি আর ১০ শতাংশ স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দল। অর্থাৎ ৭০ শতাংশ ভোটার হলেন ‘দলীয় অনুগত ভোটার’। বাকি ৩০ শতাংশ দোদুল্যমান ভোটার। এরাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের। এই ৩০ শতাংশের মধ্যে ৫৬ শতাংশ (যা মোট ভোটের ১৬ শতাংশ) ভোট প্রয়োজন হবে জয়ের জন্য। দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সম্ভাব্য যেসব বিষয় নিয়ে  প্রচারণা চালাবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো- উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড; সামষ্টিক অর্থনীতি; ঘুষ, দুর্নীতি, কালো টাকা-অর্থ পাচার; দ্রব্যমূল্য; আইনশৃঙ্খলা-বিচার; সরকারি শাসন সংস্কৃতি; মানবাধিকার; ডিজিটাল প্রযুক্তি; ২০১৮ এর নির্বাচন; ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক বিষয় হিসেবে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা।

সর্বশেষ খবর