শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

পরিচিত ইডেনে অপরিচিত টাইগাররা

আকাশবাণী কলকাতা এবং কলকাতা হাই কোর্টের ঠিক পেছনে বিখ্যাত ইডেন গার্ডেন।

‘নন্দনকানন’ ইডেন ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম পুরনো ও সেরা ক্রিকেট ভেন্যু। এ মাঠে খেলেই বড় হয়েছেন প্রণব রায়, সৌরভ গাঙ্গুলির মতো বিখ্যাত সব ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে পুণে কিংবা চেন্নাইয়ের মতো অপরিচিত ভেন্যু নয় ইডেন। হাতের তালুর মতো চেনা না হলেও পরিচিত।

অথচ পরিচিত ভেন্যুতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এসেছেন একেবারে অপরিচিত চেহারায়। এসেছেন বিধ্বস্ত মানসিকতায়, টানা হারের ক্লান্তি নিয়ে। মুম্বাই থেকে ক্রিকেটাররা ২৫ অক্টোবর বিকালে যখন কলকাতায় পা রাখেন, তখন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পরিচিত চেহারায় ফিরতে উড়ে যান ঢাকায়। পলোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে সেখানে ব্যক্তিগত অনুশীলন করেন। বিশ্বকাপের ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত ছুটি নিয়ে দেশে ফেরার ঘটনা বোধহয় এটাই প্রথম। সাকিব গতকাল কলকাতায় ফিরেছেন। আজ দুপুরে দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দেবেন এবং আগামীকাল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে মানসম্মানের ম্যাচে খেলবেন। পরিচিত ইডেনে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। দুই দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে। শুধু রান রেটে এগিয়ে ইউরোপীয় দেশটি। ম্যাচটি জেতার

জন্য মরিয়া সাকিব বাহিনী। ইডেন গার্ডেনে প্রথম টেস্ট খেলা হয় ইংরেজ শাসন আমলে, ১৯৩৪ সালে। প্রথম ওয়ানডে ১৯৮৭ সালে এবং প্রথম টি-২০ ম্যাচ ২০১১ সালে। এই মাঠের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নাম। ইডেনে সর্বশেষ যে টেস্ট হয়েছিল, সেটা খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই টেস্ট ম্যাচটি ছিল গোলাপি বলে। দুই দেশ নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে টেস্ট খেলেছিল। যদিও পাঁচ দিনের টেস্ট শেষ হয়েছিল আড়াই দিনে। ওই ম্যাচে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ লড়াকু ব্যাটিং করেছিলেন। মুশফিক খেলেছিলেন ৭৪ রানের ইনিংস। ইডেনে বাংলাদেশ একমাত্র ওয়ানডেটি খেলেছে ৩৩ বছর আগে, এশিয়া কাপে। ম্যাচটি ভারতের বিরুদ্ধে নয়, খেলেছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। ৬১ রানে হারের ওই ম্যাচে আতহার আলী ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বিশ্বকাপে ধারাভাষ্য দিতে আসা আতহার খেলেছিলেন ৭৮ রানের দারুণ এক ইনিংস। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে আতহার প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন। টাইগাররা ইডেনে খেলতে এসেছে টানা চার হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে। ডাচ বাহিনীর বিরুদ্ধে জয় নিয়ে মোমেন্টাম পেতে চায় বাংলাদেশ। যদিও পরিসংখ্যাণে দুই দলই সমানে সমান। একটি করে জয় দুই দলের। ১৮৩৬-১৮৪২ সাল পর্যন্ত ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড অকল্যান্ড। পোশাকি নামের আড়ালে তার নাম ছিল ‘জর্জ ইডেন’। তার দুই বোন সঙ্গে থাকতেন। যাদের পরিচয় ছিল মিসেস ইডেন নামে। কলকাতায় এসে দুই বোনের মন হাঁপিয়ে উঠেছিল। দুই বোন প্রাণ খুঁজতে সান্ধ্য ভ্রমণে যেতেন। কিন্তু তাদের মন ভরত না ঘন জঙ্গলভরা ময়দানে। চারদিকে ঘন জঙ্গলের ওই ময়দানের এদিক-ওদিক বাস করত হাতেগোনা কয়েকটি তাঁতি পরিবার। এই মাঠটিকে দুই বোনের জন্য সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন লর্ড অকল্যান্ড। বড় বোন এমিলি গার্ডেনের নামেই মূলত ইডেনের নামকরণ। ইডেনের সামনে লর্ড অকল্যান্ডের একটি মূর্তি ছিল। পরে সেটি সরিয়ে হাই কোর্টের সামনে রাখা হয়। ১৮৬৪ সালে স্টেডিয়ামের গোড়াপত্তন হয়। অবশ্য এই ময়দানে ১৮২৫ সাল থেকে ক্রিকেট খেলত ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব। স্টেডিয়ামটি একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট ভেন্যু ছিল। যার ধারণক্ষমতা ছিল লাখের ওপর। শুধু মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠের ধারণক্ষমতা ছিল লাখের ঘরে। এখন সবচেয়ে বড় ক্রিকেট মাঠ আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম। যার ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৩২ হাজার। ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল হয়েছিল। এবার হবে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ২০১১ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হয়। ধারণক্ষমতা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৩৪৯ জনে। 

সর্বশেষ খবর