শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজধানীর বহুতল ভবনে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বহুতল ভবনে আগুন

রাজধানীর মহাখালীর আমতলীতে বহুতল ভবন খাজা টাওয়ারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল ৪টা ৫৮ মিনিটে ১৪তলা ওই ভবনের ১৩ তলায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুনের সময় আতঙ্কিত এক নারী নবম তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া ওপর থেকে দড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে ও মাথায় কাচ পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন। ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছেন অনেকেই। ভবন থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন কেউ কেউ।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বিকালে ওই ভবনের ১৩ তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১১ ইউনিট আগুন নেভাতে ও উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। তারা ভবনের ছাদ এবং বিভিন্ন তলায় আটকেপড়া আটজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃতদের আশপাশের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী অংশ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। এ ছাড়া আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনী। আগুন লাগার পর আমতলী থেকে গুলশান এক নম্বরমুখী সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকা ও তার আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্রের কর্মী মো. আরিফুল জানান, তাদের হাসপাতালে একজন নারীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। ১৪ তলা ভবনটিতে ব্যাংক, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। ভবনের নবম ও দশম তলা মিলিয়ে রেইস অনলাইনের কার্যালয়, সার্ভার রুম। ওই প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী জানান, তাদের একজন নারী সহকর্মী পেছন দিকের বারান্দা থেকে তার ধরে নামার সময় পড়ে গেছেন বলে তারা শুনেছেন। ভবনটি থেকে ওই নারীকে পড়ে যেতে দেখেছেন পবন সাহা নামে এক দোকানকর্মী। তিনি বলেন, আগুনের কিছুক্ষণ পর সাড়ে ৫টার দিকে ভবনের ১১ বা ১২ তলা থেকে তার ধরে নামার চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন। এ সময় বোরকা পরিহিতা একজন নারী নামতে গিয়ে প্রথমে এসির ওপর পড়েন, তারপর নিচে পড়ে যান। নিচে ভিড়ের মধ্যে থেকে একজন ওই নারীকে ধরার চেষ্টা করেন। ওই নারী তার ওপর পড়লে তিনিও আহত হন। পরে দুজনকেই হাসপাতালে পাঠানো হয়। মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য কেন্দ্রের কর্মী আনিসুর রহমান জানান, তাদের হাসপাতালে দুজন এসেছেন। একজনের হাত পুড়ে গেছে, আরেকজনের পা ভেঙে গেছে। ফায়ার সার্ভিস টিটিএলের সাহায্যে খাজা টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরের বাইরের কাচের আবরণ ও জানালার গ্লাস ভেঙে ভবনে আটকেপড়া লোকদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাত প্লাটুন সদস্য কাজ করে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখা, আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা করতে দুই প্লাটুন ব্যাটালিয়ন আনসার এবং ৫ প্লাটুন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার বলেন, ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। পুলিশ এবং র‌্যাবের সদস্যরা দফায় দফায় উৎসুক জনতাকে সরিয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পর তারা আবারও কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। এতে বাধাগ্রস্ত হয় আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ।

খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনায় এনআরবি নামে একটি ডাটা সেন্টার পুড়ে গেছে। কয়েকটি আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) শাটডাউন করায় দেশে ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়। ফলে ইন্টারনেটে ঢুকতে বেগ পেতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপ-নির্ভর যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে। দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ঢাকা কোলা নামের আরেকটি ডাটা সেন্টার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ওটা পুড়ে গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। খাজা সেন্টারে লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট ও উইনস্ট্রিম আইআইজি পুড়ে গেছে। ফলে আমরা এরই মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ হারিয়েছি। কবে নাগাদ ইন্টারনেটের এই গতি ফিরবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে। একটি আইএসপি তাদের গ্রাহকদের লিখেছে, ‘সম্মানিত গ্রাহক, মহাখালী খাজা টাওয়ারে অবস্থিত ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার ফলে আমাদেরসহ দেশের বহু আইএসপির ব্যান্ডউইথ ডাউন রয়েছে। যার কারণে এই মুহূর্তে সব গ্রাহক ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। আমরা আশা করি, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং ইন্টারনেট কানেকশন সচল হবে। ধৈর্য ধরে সময় দিয়ে সহযোগিতা করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

সর্বশেষ খবর