শনিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল, সতর্ক পাহারা

আজ সবচেয়ে বড় শোডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল, সতর্ক পাহারা

রাজধানীতে গতকাল আওয়ামী লীগের সতর্ক পাহারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের আগের দিন রাজধানীতে শান্তি মিছিল-সমাবেশ নিয়ে সরব উপস্থিতি ছিল দলটির নেতাকর্মীদের।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে, পাড়ামহল্লায় মিছিল করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা। শান্তি ও উন্নয়ন মিছিল থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নৈরাজ্য, সন্ত্রাস মোকাবিলায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল রাজপথ দখলে থাকলেও আজ হবে স্মরণকালের সেরা শান্তি সমাবেশ। আজকের সমাবেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেবেন। সহযোগী সংগঠন ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। আজ তাদের জন্য শক্তি দেখানোর দিন।

জানা গেছে, আজকের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আগে থেকেই রাজপথ দখলে রাখার নির্দেশনা ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির নির্দেশনায় উত্তরের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে শান্তি মিছিল হয়। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নির্দেশনায় শান্তি মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডেইজী সরোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলির নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গতকাল মিছিল বের করেন।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরের সবুজবাংলা থেকে গুদারাঘাটে শান্তি মিছিল বের করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সাবিনা আকতার তুহিন। এ মিছিলে ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতারা অংশ নেন। মোহাম্মদপুর ৩২, ৩৩, ২৯, ৩১ ও ৩৪ শান্তি মিছিল হয়। নেতৃত্ব দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানা। মোহাম্মদপুর থানা সভাপতি এম এ সাত্তার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা-১৮ আসনের এমপি ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানের নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব, পশ্চিম থানা ও তুরাগ থানায় মিছিল হয়। ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরীর নেতৃত্বে উত্তরখান, দক্ষিণখান, দক্ষিণখান কাশিবাড়ীতে শান্তি মিছিল হয়। শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের নেতৃত্বে শ্যামপুর ওয়াসা গেট থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত শান্তি মিছিল বের করা হয়। এ সময় থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাজী নুর হোসেন, তাজুল ইসলাম তাজু, কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সাইদুল, গোলাম সরোয়ার মামুন, আজিজ আহমেদ, ছাত্রলীগের জিহাদ মাতব্বরসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। ডেমরার ডগাইর এলাকায় আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের উন্নয়ন-প্রচারপত্র বিতরণ করেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল। উপস্থিত ছিলেন ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান মোল্লা শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক রায়হান জামিল রিপন, সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোবারক সাউদ, ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. সোহেল খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান মাহমুদ অপু, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের নেতা নজরুল ইসলাম বাবু প্রমুখ। ঢাকা-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপার, শনিরআখড়া, ধনিয়া এলাকায় শান্তি মিছিল হয়।     

যুবলীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা : আওয়ামী যুবলীগের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আসনভিত্তিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা-৮ আসনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের উদ্যোগে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম রেজা।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিছিল : সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে রাজধানীতে গত দুই দিন শান্তি মিছিল হয়েছে। রাজধানীর শেওড়াপাড়া হয়ে মিরপুর গোলচত্বর, গুলিস্তান, পল্টন এলাকায় এসব মিছিল করা হয়। পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান নাঈম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ প্রমুখ। শেওড়াপাড়া থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এস এম জাহিদের নেতৃত্বে একটি মিছিল মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক, যুব মহিলা লীগের ইসরাত জাহান নাসরিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদুজ্জামান রাজু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সন্ধ্যা থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নেতা-কর্মীর ভিড় : আজকের সমাবেশ ঘিরে গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আসতে শুরু করেন নেতা-কর্মীরা। অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ছোট মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিছিল নিয়ে আসেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।

আজ সবচেয়ে বড় শোডাউন : আজকের সমাবেশ কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াত যাতে সহিংস হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সব থানা, ওয়ার্ড, ঢাকার আশপাশের জেলা ও উপজেলা নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তারা সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছেন। ইতিপূর্বে যতগুলো সমাবেশ হয়েছে, তার মধ্যে এটিই হবে স্মরণকালের শোডাউন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উন্নয়ন-শান্তি সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আজকের শান্তি ও উন্নয়নের সমাবেশ হবে স্মরণকালের সমাবেশ। ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করবে, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় আবারও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ৫০ হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেবেন শান্তি সমাবেশে। নেতা-কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেখার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী থাকবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শান্তি সমাবেশে কেউ উসকানি দিলে প্রতিহত করব। আক্রমণ করলে পাল্টা জবাব দেব।

ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় লড়াই করছে। এ লড়াই অব্যাহত আছে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুকন্যার ভ্যানগার্ড। তাকে সুরক্ষিত করা। তার চলার পথ মসৃণ করতে যা করা দরকার ছাত্রসমাজ তা করবে।

আজ মাঠে থাকবে মুক্তিযোদ্ধারাও : আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আবদুল আহাদ চৌধুরী ও সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঢাকায় বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজ এলাকার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। কর্মসূচি মনিটরিং করবেন সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, কে এম মোজাম্মেল হক, আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, আবদুল করিম সরকার, মো. কায়কোবাদ, শাহাবুদ্দিন, নুর ইসলাম মোল্লা, কমান্ডার মোশারফ হোসেন, মো. শাহজাহান, আবুল বাসার, আহমেদ উল্ল্যা রতন, এবি সিদ্দিক মোল্লা, জামাল খাঁ।

সর্বশেষ খবর